ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে উল্টাতে আর ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনির মাঝেই ঘাসের ডগায় নতুন শিশির বিন্দু। মধ্যরাতে আতশবাজি ফাটিয়ে পুরনো দিন শেষে নতুনকে স্বাগত জানানো। পুরনো ব্যর্থতাকে পেছনে রেখে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা। আরো একটি নতুন বছর, নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্বপ্নে বোনা কাব্য। পৃথিবীর বর্ষপরিক্রমায় আরেকটি পালক। নতুন একটি বর্ষে পদার্পণ করল এই ধরণী।
কালের খেয়ায় নথিভুক্ত হলো আরো একটি বছর, আরো ৩৬৫ দিন। সম্ভাবনার অপার বারতা নিয়ে শুরু হলো নতুন বছর। বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর ২০২২। আর বছরের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানাতে ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের মানুষ মেতেছে হ্যাপি নিউ ইয়ার উৎসবে।
মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরো একটি বছর। পুরনো বছরটি পেছনে ফেলে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার দুরন্ত আহ্বানে মানুষ স্বাগত জানায় ভবিষ্যৎকে। বিদায়ী বছরের র্ব্যতাকে সরিয়ে রেখে নতুন বছরে নতুনভাবে শুরু হলো পথচলা। সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন হলো শুরু। পুরনো বছরের সংশয়, সংকট, উদ্বেগ কাটিয়ে উঠে নতুন আশায় নতুন করে দিনযাপন শুরু আজ থেকে। বিশ্ববাসী প্রবেশ করল একুশ শতকের তৃতীয় দশকের আরো একটি নতুন বছরে।
বর্ণিল আয়োজনে ইংরেজি নববর্ষ পালনের রীতি অনেক পুরনো। এটি শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে। গবেষকদের মতে, মেসোপটোমিয়ান সভ্যতায় নববর্ষ উদযাপনের রীতি শুরু হয়। তবে নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ব্যাবিলনবাসীরা প্রায় ২ হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দে বিপুল আয়োজনে বর্ষবরণ শুরু করে। প্রাচীন ব্যাবিলনে নতুন বছর শুরু হতো চাঁদ দেখা সাপেক্ষে।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩ সালে রোমান সিনেটররা ঘোষণা করেন জানুয়ারির এক তারিখই হবে বছরের পহেলা দিন। এরপরও খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সাল পর্যন্ত বর্ষপঞ্জি পরিবর্তিত হতে থাকে। সম্রাট জুলিয়াস সিজার এটি আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এ কারণে একে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারও বলা হয়। পরে ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করে নতুন বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করেন। সেই অনুসারে বিশ্বব্যাপী ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপিত হয়ে আসছে।
পৃথিবীর প্রায় সব জাতি নববর্ষের প্রথম দিনটি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী পালন করে। জাতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে এই বর্ষবরণ সম্পৃক্ত। ইরান, গ্রিস, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ তাদের নিজস্ব কৃষ্টি অনুযায়ী নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। শুধু ইউরোপের কিছু দেশ আর আমেরিকা এই দিনটিকে জানুয়ারি মাসে ‘নিউ ইয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করে। ইংরেজি নববর্ষ আয়োজনে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গতকাল শুক্রবার সদ্যবিদায়ী ২০২১ সালের শেষ দিন থার্টিফার্স্ট উদযাপিত হয়েছে নানা আয়োজনে।
Discussion about this post