মহামারি করোনাভাইরাসের তাণ্ডবনৃত্যে কাঁপছে দেশ। এ বছরের শুরু থেকে ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নতুন করে ভীতির সঞ্চার করেছে। নতুন এ ধরনে আক্রান্তের হারও দ্রুত বাড়ছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা সংস্থা, বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআরবি সোমবার (২৪ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের তিনটি উপধরন (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) হয়েছে। এ উপধরনগুলো রাজধানী ঢাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
আইসিডিডিআরবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে ৩৭৯ জন কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে আইসিডিডিআরবি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাদের মধ্যে ২৬০ জনই ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত। শতকরা হিসাবে যা ৬৯ শতাংশ।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জায়গা নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন একটু একটু করে দখল করে নিচ্ছে। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, নতুন করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ শতাংশ ওমিক্রন আক্রান্ত।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জিম্বাবুয়েফেরত দুই নারী ক্রিকেটার করোনার ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল। এরও ৫ দিন আগে গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ ভ্যারিয়ান্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়। ওই সময় ৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের শরীরে নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট পায় আইসিডিডিআরবি। বাকি ৭২ জনই ছিলেন ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত। তবে বছরের শুরুতেই বদলে যায় চিত্রপট। ধীরে ধীরে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের চেয়ে ওমিক্রন শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে।
এরইমধ্যে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অন্য যে কোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে তুলনামূলক দ্রুত ছড়াতে সক্ষম ওমিক্রন।
প্রতিবেদনে আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনার আলফা ভ্যারিয়ান্টের আধিপত্য ছিল। ওই বছরের মার্চে শনাক্ত হয় বেটা ভ্যারিয়ান্ট। মে মাসের মধ্যেই সেই ধরনটিতে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য ধরনগুলোকে ছাড়িয়ে যায়।
এরপর ২০২১ সালের মে মাস নাগাদ দেশে প্রথম ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট শনাক্ত হয়। জুন মাস নাগাদ সংক্রমণের দিক থেকে এটি আগের সব ভ্যারিয়েন্টকে ছাড়িয়ে যায়।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর সংক্রমিত হয়েছেন এমন অন্তত ২৪ জন রোগীসহ ২৯ জনে কথা বলেছেন আইসিডিডিআরবি। যাদের মধ্যে পুরুষ ১৩ জন আর নারী ১৬ জন। এদের মধ্যে ২৪ জনই কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ডোজের টিকা পেয়েছেন আর তিনজন পেয়েছেন প্রথম ডোজের টিকা। তাদের কারোর মধ্যে হালকা উপসর্গ, কারোর মধ্যে কোনো উপসর্গই দেখা যায়নি। এই ২৯ জনের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে মাত্র একজনকে। তাদের একজন মাত্র সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাকি সবাই দেশেই ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল রোববারের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন আক্রান্তের হার ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ। রোববার দেশে একদিনে নতুন রোগী শনাক্ত হন ১০ হাজার ৯০৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৬ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ২২৩ জনের।
করোনার নতুন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটিকে ‘সুপারস্প্রেডার’ ভ্যারিয়ান্ট হিসেবে বর্ণনা করে থাকেন বিজ্ঞানীরা।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই বছরের শেষ দিকে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন-জুলাই পর্যন্ত করোনার ডেল্টা ধরন ব্যাপক আকার ধারণ করে। বছরের শেষ কয়েক মাস পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল থাকলেও এ বছরের শুরু থেকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার বিস্তার আবারও বাড়তে শুরু করে।
সূত্র: জাগো নিউজ
Discussion about this post