৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত তদন্তপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
রোববার বিকাল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
সমাবেশে সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ প্রতিবাদ করে আসছে। সম্প্রতি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণমাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে সাড়ে তিনশো কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ কর্তৃক ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ দুর্নীতি উঠে এসেছে। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের নামে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা শুনেই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে জমি কিনেছেন ডা. দীপু মনির পরিবারের লোকজন। পরে এই জমি স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ গুণ দামে অধিগ্রহণের দরপত্র দাখিল করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর বড় ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ২০২০ সালের জুন-জুলাই মাসের বিভিন্ন তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার কয়েকটি মৌজায় ৯৯ শতাংশ জমি কেনেন। একই বছরের ২১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক একর ৬১ শতাংশ জমি কেনেন ডা. দীপু মনির মামাতো ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর একান্তজন সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানও সেবছর একই এলাকায় এক একর জমি কেনেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন পাস হওয়ার কয়েক মাস পরেই পরিকল্পিতভাবে ওই এলাকার বিভিন্ন মৌজায় বেনামে জমি কেনা হয়। ভূমি অধিগ্রহণের দরপত্র আহ্বান করা হলে সেই জমিই দেখানো হয় বাজার মূল্যের ২০ গুণ বেশি দামে। দরপত্রে ভূমি অধিগ্রহণের মূল্য অস্বাভাবিক দেখে তা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গত বছরের ২৪ অক্টোবর জেলা কানুনগো ও সার্ভেয়ারদের সমন্বয়ে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত দাগের জমিগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৭ টাকা থাকলেও দরপত্রে তা দেখানো হয় ৫৫৩ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজার ২৯০ টাকা। যা বাজার মূল্যের ২০ গুণ বেশি।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহীন সিকদার বলেন, তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত দাগের ভূমি হস্তান্তর ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২ টাকা। একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন, আমরা রাষ্ট্রের অর্থ লুটের চেষ্টাকারী দুর্নীতিবাজদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই। শিক্ষামন্ত্রীর নিকট আহ্বান, আপনি দ্রুত আপনার ভাইদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রমাণ করুন যে, আপনার মন্ত্রণালয় কোনো দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি দুর্নীতিবাজদের পক্ষ নিবেন না। কারণ দুর্নীতিবাজরা দেশ ও জাতির শত্রু।
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, জনগণের নিকট দুদক অবশ্যই দায়বদ্ধ। বিদেশে অর্থ পাচারকারী সকল দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দুদকের নৈতিক দায়িত্ব। দুদককে আরোও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। লোক দেখানোর জন্য শুধু চুনোপুটিদের ধরলেই হবে না, রাঘব বোয়ালদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। দুদকের নিকট আহ্বান চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনগণের টাকা লুটকারী দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, সরকারকে অবশ্যই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে দুর্নীতিবাজদের বিচারের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে শিক্ষামন্ত্রীকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগের দাবি জানান তিনি।
সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল
Discussion about this post