দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্কের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় সেরা বক্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মো. ইয়াসিন আলী নিজ গ্রামে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি)
গ্রামে ফেরার পর তাকে সংবর্ধনা দিয়েছে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলীনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। এদিন দুপুরে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের কক্ষে ইয়াসিনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এসময় তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন শিক্ষকবৃন্দ। পরে সার্ক থেকে দেয়া আলীনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নামে একটি পুরস্কার অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেন, ইয়াসিন আলী। এসময় সংক্ষিপ্ত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবেগে আপ্লুত হয় আলীনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ইয়াসিন আলীর বাবা-মা। “করোনা এবং বঙ্গবন্ধু প্রতিভা” শীর্ষক প্রতিযোগিতায় এই কৃতিত্ব অর্জন করে ইয়াসিন।
সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরস্কার পেয়েছেন দশম শ্রেণীর ছাত্র ইয়াসিন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ইয়াসিন আলীকে পুরস্কার তুলে দেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
গত ২৩ জানুয়ারি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীর সার্ক ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ামে ইয়াসিন আলীর হাতে শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
সার্কভুক্ত ৮ দেশের প্রত্যেক দেশ থেকে ৩ জন করে মোট ২৪ জন প্রতিযোগী নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও ভূটানের দুইজন প্রতিযোগীর করোনা পজিটিভ হওয়ার কারণে দুইজন অংশ নিতে পারেননি। তাই এই প্রতিযোগিতায় ৮ দেশের ২২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
গ্রামে ফিরে নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন ইয়াসিন আলী। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এ আনন্দ-অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বিভিন্ন মানসিক চাপ নিয়ে ভারতে গেলেও ফিরেছি জয়ের উল্লাস নিয়ে। প্রতিযোগিতায় দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পেরে আমি ধন্য ও কৃতজ্ঞ। যারা আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন চিরকৃতজ্ঞ থাকব তাদের প্রতি।
এ সাফল্য দেশের প্রতি আরো বেশি দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেবে। গ্রামের স্কুলে পড়েও বিশ্বজয় করা যায় আমিই তার প্রমাণ।
ইয়াসিন আলী বলেন, আমার চেয়েও অনেক প্রতিভাবান ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তারা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় না। তাদেরকে সেই সুযোগ করে দিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে স্কুল শিক্ষক ও অভিভাবকদের।
একটু সুযোগ পেলেই তারা তাদেরকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সক্ষম হবে। প্রমাণ করতে পারবে, পাকিস্তানিরা আমাদের মেধাশূন্য করতে পারেনি। এ সাফল্যের মূলমন্ত্র কী, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে প্রতিকূলতার শেষ নেই। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মনোবলের। শত বাধা থাকলেও হতাশ না হয়ে নিজের লক্ষ্যে অটুট থাকলে সফলতা সম্ভব। তবে বাবা-মা ও পরিবারের সমর্থন ছাড়া কোনো বড় সাফল্য নিয়ে আসা সম্ভব নয়। প্রয়োজন শিক্ষকদের সহয়তা। যার সবগুলো উপাদানই আমার পক্ষে ছিল। পরিবার আমাকে দারুণ অনুপ্রেরণা দিয়েছি। বিশেষ করে বড় বোন, খালা-ফুফুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। ইয়াসিন আলী বলেন, জীবনে কখনো আদালতের মুখোমুখি হইনি। তবে এলাকার মানুষের কাছে বিচার না পাওয়ায় ও এখানে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কথা শুনেছি। সেই থেকে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন।
ইনশাআল্লাহ, নিজের স্বপ্ন পূরণ করে দেশের সাধারণ খেটে-খাওয়া অসহায় মানুষের জন্য ন্যায় বিচার উপহার দিতে পারব। বাবা আনোয়ারুল ইসলাম ছেলের সাফল্যের অনুভূতি জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। তিনি জানান, ছেলেকে সঠিকভাবে আর্থিক সহায়তা করতে পারি না। তারপরেও নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সে এতোবড় অর্জন করতে পেরেছে। আশা করি, তার এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মো. মাসুম বলেন, পুরো ইউনিয়নবাসী তার জন্য গর্বিত ও আনন্দিত। এজন্য আলাদাভাবে ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করা হয়েছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তার সাফল্যের যেন ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। সে শুধু বাংলাদেশ নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা, গোমস্তাপুর উপজেলা, তথা আলীনগর ইউনিয়নের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর গ্রামের মো. আনোয়ারুল ইসলাম ও মোসা. নাহার বানু বিউটির ৩ মেয়ে ও এক ছেলের ছোট সন্তান ইয়াসিন আলী।
জানা যায়, বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই বক্তৃতা ও বির্তক প্রতিযোগিতায় পারদর্শী ইয়াসিন। নিজ স্কুলের সব প্রতিযোগিতাতেই শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয় মেধাবী ছাত্র ইয়াসিন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ৮ দেশের প্রতিযোগীদের মধ্যে ইয়াসিনের এই সাফল্যে খুশি তার পরিবার, সহপাঠী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ।
Discussion about this post