নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির করে দেওয়া সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেদের পছন্দের ১০ জনের একটি তালিকা দেবে আওয়ামী লীগ। আজ বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দলের পক্ষ থেকে তালিকাটি জমা দেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় উপস্থিত সদস্যদের প্রত্যেকের কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার কারা হতে পারেন, এমন যোগ্যতাসম্পন্ন পছন্দের ব্যক্তিদের নাম চান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। পরে দলীয় প্রধানের কথামতো প্রত্যেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ১০ জনের নাম লিখিতভাবে জমা দেন। সভায় উপস্থিত থাকা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ নেতাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছয় জনের নাম প্রস্তাব করেছেন। তারা হলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুই জন সাবেক বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, আবু বকর সিদ্দিকী, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসির) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ও সাবেক আইনসচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৈঠকে সব প্রেসিডিয়াম সদস্য জমা দেওয়া নামগুলো যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী আজ সার্চ কমিটির কাছে আওয়ামী লীগ তাদের পছন্দের ১০টি নাম পাঠাবে।
জমা দেওয়া তালিকায় উল্লিখিত ছয়টি নাম কমন রয়েছে বলে জানান অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বর্তমানে বিশ্বব্যাংকে বিকল্প নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে তার চাকরির মেয়াদ আগামী নভেম্বর পর্যন্ত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ কিছুদিন আগে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী গত বছরের ২৯ জুলাই অবসরে যান।
মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে বলেন, পৃথিবীর কয়টি দেশে এমন আইন রয়েছে, সে সম্পর্কেও জনগণকে জানাতে হবে। প্রসঙ্গত, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সিইসি পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন সাবেক সচিব ড. এ টি এম শামসুল হুদা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তার নেতৃত্বেই অনুষ্ঠিত হয়। এর পরের দুই জন সিইসিও ছিলেন সাবেক আমলা। তারা হচ্ছেন সাবেক দুই সচিব কাজী রকিবউদ্দীন এবং কে এম নূরুল হুদা। বিচারপতিদের মধ্যে সর্বশেষ সিইসি পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন বিচারপতি এম এ আজিজ। ওয়ান-ইলেভেনের আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে তাকে বিচারপতি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সভায় বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ করতে বলেন তিনি। সভায় আট বিভাগে কেন্দ্রীয় যে আটটি টিম রয়েছে, আওয়ামী লীগের ঐ টিমগুলোকে সফর শুরু করতে নির্দেশ দেন দলীয় প্রধান। যেসব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন হয়নি, সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন তিনি। সাংগঠনিক সফরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে এবং বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের কথা জনগণকে জানানোর জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাস করে না—এটা তুলে ধরতে হবে। এ সময় জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে হবে, ২০০১ সালে বিনা রক্তপাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
আর বিএনপি ১৯৯৬ সালে ও ২০০৬ সালেও ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সব চেষ্টা করেছে। ওই দলের মুখে গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে এত বড় বড় সবক মানায় না। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠন ঐক্যবদ্ধ থাকলে, সরকারের উন্নয়নের প্রচার ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সোচ্চার থাকলে আগামী নির্বাচনেও বিজয়ী হবে আওয়ামী লীগ। এ সময় বিদ্রোহী বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আগের মতোই কঠোর অবস্থান তুলে ধরে বলেন, যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেছে, তারা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাবে না। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাদের রাখা হবে না। দলের তো একটা শৃঙ্খলা থাকতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে চলতে হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, তৃণমূলের সম্মেলনগুলোতে নেতা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যদের মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দলের মধ্যে যেন ‘আগাছা-পরগাছা’ ভর না করে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যেসব ‘আগাছা-পরগাছা’ দলে ঢুকে গেছে, এগুলো উপড়ে ফেলতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থী কারা হতে পারে—এ বিষয়টিও উঠে আসে প্রেসিডিয়াম বৈঠকের আলোচনায়। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, শুধু দলের কাছে জনপ্রিয়তাই নয়, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতারাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।
সূত্র : ইত্তেফাক
Discussion about this post