পাবনার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পিয়ন মোহাম্মাদ নূর হোসেন বকুল মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ‘অ্যাকাউন্টে’ স্থানীয়দের লোকজজনের অন্তত ৭০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠনের পর দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে ডাক বিভাগ। ভুক্তভোগীদের দুজন তাঁদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আমিনপুর থানায় মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও মোহাম্মাদ নূর হোসেন স্থানীয়দের কাছ থেকে অন্তত দেড় কোটি টাকা নিয়েছেন।
ডাক বিভাগের তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৭০ জন গ্রাহকের ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী অন্তত সাতজন জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারির দিকে প্রতারণার মাধ্যমে এলাকার মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পিয়ন মোহাম্মাদ নূর হোসেন ‘নগদ (পল্লবী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ)’ নামে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ভেতরেই একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এলাকার নারী-পুরুষ তাঁদের সঞ্চিত অর্থ পোস্ট অফিসে ডিপোজিট করতে গেলেই তাদের বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে ভূয়া নগদ একাউন্টে টাকা জমা নিতেন তাঁরা।
পোস্ট মাস্টার ও পিয়ন বলতেন, ‘আপনারা এখন থেকে নগদ একাউন্টে টাকা রাখেন। মাসে প্রতি লাখে মুনাফা পাবেন ১০০০ টাকা। ’ এরপর নগদ একাউন্টে ৫ বছরের জন্য ডিপোজিট করা গ্রাহককে কয়েক মাস মুনাফাও দেওয়া হয়। এভাবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতারণা করে শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
সাগরকান্দি বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার কুন্ডুর স্ত্রী পুর্ণিমা রাণী কুন্ডু জানান, তিনিও কথিত নগদ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়েছেন। তিনি মুনাফার আশায় গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ২ লাখ, ১৪ নভেম্বর ৩ লাখ এবং ৭ ডিসেম্বর ২ লাখসহ ওই অ্যাকাউন্টে মোট ৮ লাখ টাকা জমা দেন। এরপর তিনি চার মাসের মুনাফা হিসেবে ১২ হাজার টাকা পান। তবে নিজের প্রয়োজনে গত ২৮ জানুয়ারি সমুদয় টাকা ফেরত চান। তখন পোস্ট মাস্টার ও ডাক পিয়ন জানান, একদিন পর পাবনার প্রধান ডাকঘর থেকে টাকা এনে তাঁকে দেবেনে। পরদিন ৩০ জানুয়ারি তাঁরা আত্মগোপনে চলে যান।
প্রদীপ কুমার কুন্ডু মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত আট লাখ টাকা পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ ও পিয়ন বকুলের পরামর্শে সাগরকান্দি পোস্ট অফিসের নগদ একাউন্টে রেখেছিলাম। সেই টাকা নিয়ে তারা পালিয়েছে। আমাকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে। ’
স্থানীয় আলেয়া খাতুন, বুলু খাতুন, খালেক ফকির, সুফিয়া খাতুন, হুলুফা খাতুন, মানিক মোল্লাসহ ভুক্তভোগী লোকজনের অভিযোগ, পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ ও পিয়ন বকুল পোস্ট অফিসে নগদ একাউন্টে তাদের একেকজনের কাছ থেকে ২ লাখ, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ৮ লাখ করে টাকা নিয়েছে। তারা প্রত্যেক জমাদানকারীকে নগদ একাউন্টের লোগোযুক্ত বই দিয়েছেন। এভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে তাঁরা অন্তত দেড় কোটি টাকা নিয়েছেন।
সাগরকান্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগিদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ ও পিয়ন বকুলকে সম্প্রতি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। পোস্ট অফিসে নগদ একাউন্টের নামে যে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তা তখনই বুঝা যায়। এরপর থেকেই তারা আত্মগোপনে।
জানতে চাইলে পাবনা ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগিদের অভিযোগ ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তাঁদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে পাবনা প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক আব্দুল মোত্তালেব, পরিদর্শক শাহীন জোবায়ের ও সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’
তদন্ত কমিটির সদস্য শাহীন জুবায়ের হাসান খান বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তদন্ত রিপোর্টে সুপারিশ করা হবে। ’
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রওশন আলী জানান, নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতারণা করে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে পুর্নিমা রাণী ও কৃষ্ণ কুমার কুন্ডু বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও মোহাম্মাদ নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সূত্র : কালের কণ্ঠ
Discussion about this post