স্নেহ, প্রীতি-বন্ধন, প্রেম আর কৃতজ্ঞতা-শ্রদ্ধায় গড়া আমাদের এই নিত্য জীবন। এগুলোকে যদি একশব্দে বাঁধি, তাকেই বলবো ‘ভালোবাসা’।
বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের, ভাই বোনের পারস্পরিক, স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির কিংবা সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার অথবা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রিয়-প্রিয়ার এই যে হরেক রকমের সম্পর্ক, সেটাই তো ভালোবাসা! কিন্তু ভালোবাসার জন্য কি বিশেষ কোনো দিনের দরকার! তারপরও পৃথিবীর তাবৎ প্রেমিক-প্রেমিকারা একটি দিন পালন করে আসছে।
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে। প্রিয়ার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার সেই দিনটিই আজ।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবস প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এটি সেই দিন যখন একজন মানুষ আরেকজনের প্রতি তার ভালবাসা প্রকাশ করতে ভালোবাসার বার্তাসহ কার্ড, ফুল বা চকলেট পাঠিয়ে থাকে।
একজন বিখ্যাত সেইন্ট বা ধর্ম যাজকের নাম থেকে দিনটি এমন নাম পেয়েছে। তবে তিনি কে ছিলেন – তা নিয়ে বিভিন্ন গল্প রয়েছে।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে জনপ্রিয় বিশ্বাস হল তিনি খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের একজন পুরোহিত ছিলেন।
সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিবাহ নিষিদ্ধ করেছিলেন। কারণ তার মনে হয়েছিল, বিবাহিত পুরুষরা খারাপ সৈনিক হয়ে থাকে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন মনে করেছেন, এটি অন্যায়। তাই তিনি নিয়মগুলো ভেঙ্গে গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
ক্লডিয়াস যখন এই খবর জানতে পারেন, তখন তার আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
কারাগারে থাকা অবস্থায় ভ্যালেন্টাইন কারা প্রধানের মেয়ের প্রেমে পড়েন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি যখন তাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ভ্যালেন্টাইন ওই মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি প্রেমপত্র পাঠিয়ে যান।
যেখানে লেখা ছিল, “তোমার ভ্যালেন্টাইনের পক্ষ থেকে”। প্রথম ভ্যালেন্টাইন’স ডে ছিল ৪৯৬ সালে।
একটি নির্দিষ্ট দিনে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের বিষয়টি বেশ প্রাচীনকালের ঐতিহ্য, যা রোমান উৎসব থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। রোমানদের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকালিয়া নামে একটি উৎসব ছিল – আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সময়। উদযাপনের অংশ হিসাবে ছেলেরা একটি বাক্স থেকে মেয়েদের নাম লেখা চিরকুট তোলেন।
যে ছেলের হাতে যেই মেয়ের নাম উঠত, তারা দুজন ওই উৎসব চলাকালীন সময়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকতেন বলে মনে করা হয়। অনেক সময় ওই জুটিই বিয়েও সেরে ফেলতেন।
পরবর্তী সময়ে, গির্জা এই উৎসবটিকে খ্রিস্টান উৎসবে রূপ দিতে চেয়েছিল।একইসাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে এই উৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
ধীরে ধীরে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামটি মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করে। আর মানুষ তার ভালবাসার মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য এই নামটি ব্যবহার করা শুরু করে।
Discussion about this post