বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন রাজধানীর নিম্ন আয়ের বেশির ভাগ মানুষ। ৫০ ইউনিটের কম ব্যবহার করেও দাম দিতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৭০ পয়সা হারে। সব মিটার বসানোর নামে এই অনিয়মের সুযোগ করে দিচ্ছে বিতরণী সংস্থাগুলো। উল্টো দায় চাপাচ্ছেন বাড়ির মালিকদের ঘাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের সহায়তা ছাড়া এই অনিয়ম অসম্ভব। তাই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও তাদের।
রাজধানীর মধুবাগ। ১৬ কক্ষের এক বাড়িতেই ১৬ পরিবারের বাস। প্রতি কক্ষে আছে আলাদা বিদ্যুৎ মিটার। তবে এসব মিটার বিতরণ সংস্থার বসানো নয়। মালিক নিজেই বসিয়েছেন সাব-মিটার। আর বিদ্যুৎ সংযোগের বৈধ মিটার একটি।
এক বাসিন্দা বলেন, বিলের কাগজ দেয় না। যে টাকাটা আসে এর একটা রিসিট আছে। আমাদের কাছ থেকে ১০ টাকা ইউনিট হিসাব করে নেয়।
প্রতি মাসে ৫০ ইউনিটের কম ব্যবহার করলেও পরিবারগুলোকে গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের খরচ। ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৭৫ পয়সা হিসাবে বিল দেওয়ার কথা থাকলেও একটি মিটারে বিল আসায় মালিক প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ টাকা ৭০ পয়সা হারে আদায় করেন।
বাড়ির মালিক বলেন, আমরা সাব-মিটার লাগিয়ে দিয়েছি। কে, কত ইউনিট ব্যবহার করছে তা ওই মিটারের মাধ্যমে দেখছি। ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ১০ টাকা নিচ্ছি।
এলাকার বেশির ভাগ বাড়ির চিত্র একই। কোনো বাড়িতে আবার বিল নেওয়া হয় ভাড়ার সঙ্গে। ব্যবহার যাই হোক বিল একই। ফলে অপচয়ের প্রবণতা বাড়ে। থাকে না ব্যবহারের হিসাব।
এক বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুৎ বিল এভাবে বলে নাই। প্রতি মাসে ভাড়ার সঙ্গে দিয়ে দেই।
রাজধানীর কড়াইল বস্তির অবস্থা আরও ভয়াবহ। এক মিটারে সব বস্তিঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কাছ থেকে রুম প্রতি মাসে আদায় করা হয় ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
এক নারী বলেন, বস্তির ভেতরে মিটার নাই। লাইট ১০০, টিভি ২০০ আর ফ্যান ২০০ এবং ফ্রিজ ৭০০ টাকা।
রাজধানীজুড়ে এমন অরাজকতা চললেও বিতরণী সংস্থার দাবি, তাদের এসব জানা নেই।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, বাড়িওয়ালা কী করছে, সেটা আমি জানি না।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আজকে যদি সে নিজে ব্যবহার করত তাহলে সে একটার পরিবর্তে তিনটা নেওয়ার চেষ্টা করত। যেটা অনেকে করে। এক্ষেত্রে সে যেহেতু নিজে বিলটা দেয় না। সে কারণে সে এটা নিয়ে চিন্তা করে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের যোগসাজস ছাড়া ভবন মালিকদের এমন অনিয়মের সুযোগ নেই। এগুলো দেখার দায়িত্ব রেগুলেটরি কমিশনের এবং বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির। কিন্তু বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো এসব করে না।নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে বিতরণী সংস্থার পাশাপাশি সরকারকেও নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র : আরটিভি
Discussion about this post