ভারতের দেরাদুনের স্পোর্টস কমপ্লেক্সকে এতদিন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এবার দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মাল্টি স্পোর্টস অ্যারেনা। যার নাম বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স। আর এর স্বপ্নদ্রষ্টা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক তারকা হকি খেলোয়াড় আহমেদ আকবর সোবহান।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘এন’ ব্লকে গড়ে উঠছে এই অত্যাধুনিক ক্রীড়া কমপ্লেক্স। এই কমপ্লেক্সে থকাছে ইউরোপীয় ফুটবলের ধাচে নির্মিত একটি ফুটবল স্টেডিয়াম, ক্রিকেট ও হকি স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের প্রচলিত খেলাধুলার সুব্যবস্থা। প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এই বিশাল ক্রীড়া স্থাপনা। এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। জমি ও অন্যান্য খরচ ধরলে যা দাঁড়ায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ৫৫ বিঘা জমিতে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল ও ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছাড়াও হকি স্টেডিয়াম, ফুটসাল, ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। পরবর্তীতে বসুন্ধরা কিংসের অগ্রগতি এবং স্পোর্টসে বসুন্ধরা কিংসের যে ভূমিকা, তার প্রেক্ষিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান উদ্যোগটাকে আরও সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর আরও ১৩৫ বিঘার মতো জায়গা সম্প্রসারিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার একটি আন্তর্জাতিকমানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম, অনুশীলন মাঠ, নেট প্যাকটিসের ব্যবস্থা থাকবে। সাউথ জোনে একাডেমি এবং ডরমেটরিতে প্রায় ৫০০ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে।
স্পোর্টস কমপ্লেক্সের একটা অংশ হচ্ছে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এখানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের ম্যাচ শুরু হবে। এই অ্যারেনার কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, পরের মৌসুম শুরুর আগেই বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে। কয়েক মাসের মধ্যে এখানে ফ্লাডলাইটের কাজও শেষ হবে, যাতে আন্তর্জাতিক ম্যাচও আয়োজন করা যাবে। এই অ্যারেনায় খেলোয়াড়দের জন্য ড্রেসিংরুম, আইস বাথের ব্যবস্থা, উন্নতমানের জিমনেশিয়াম, কনফারেন্স রুম থাকছে। ৮ স্তরের গ্রাউন্ডে পানি সরানোর জন্য থাকছে উন্নতমানের পানি শোষণের ব্যবস্থা। এই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে ১৪ হাজার দর্শক খেলা উপভোগ করতে পারবেন।
এখানেই শেষ হয়, এই কমপ্লেক্সে একটি ওপেন গলফ ক্লাব, বাস্কেটবল কোর্ট, ভলিবল কোর্ট, স্কোয়াশ, আর্চারি এবং শুটিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তাছাড়া থাকছে সাঁতারের জন্য অলিম্পিক মানের সুইমিং পুল। একটি আট লেনের ৫০ মিটারের, অন্যটি ছয় লেনের ২৫ মিটারের। আরও থাকছে দৃষ্টিনন্দন ল্যান্ডস্কেপ এবং মাল্টিপারপাস স্টুডিও। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে স্পোর্টসের পাশাপাশি এখানে এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এজন্য আরও ৬০ বিঘা জায়গা কমপ্লেক্সের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেখানে এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক করা হচ্ছে। এখানে থাকছে ওয়াটার পার্ক, কিডস জোন, গ্রিন পার্ক, দৃষ্টিনন্দন লেক ইত্যাদি।
সম্প্রতি বসুন্ধরা কিংসের নারী ফুটবল দল ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোতে দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। এই সাফল্যের কারণে বসুন্ধরা কিংসের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় নারীদের জন্য আরও ৫০ বিঘা জায়গা কমপ্লেক্সের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেখানে থাকছে নারী ফুটবলারদের জন্য নিজস্ব ফুটবল স্টেডিয়াম এবং ট্রেনিং স্পেস। এখানে কিংসের নারী ফুটবলারসহ একাডেমির খেলোয়াড়দের থাকার সুব্যবস্থাও থাকছে। সেই হিসেবে ৫৫ বিঘা দিয়ে শুরু করে কমপ্লেক্সের মোট আয়তন দাঁড়াচ্ছে ৩০০ বিঘায়। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মাণকাজ প্রায় ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স নিয়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রত্যাশা তৈরি হচ্ছে। এখান থেকে শত শত দক্ষ ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদী ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা। সবমিলিয়ে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে এই কমপ্লেক্স। বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের ভাষ্য মতে, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গর্ব করার মতো বেশি কিছু নেই। বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মধ্যে দিয়ে কিছুটা হলেও গর্ব করার সুযোগ হলো। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেও এই কমপ্লেক্স নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। আমি মনে করি ক্রীড়া কমপ্লেক্স আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে। ‘
সূত্র : বাংলানিউজ
Discussion about this post