করোনা টিকা গ্রহণে অস্বীকার করায় নিউ ইয়র্ক শহরে প্রায় দেড় হাজার কর্মচারি চাকুরি হারিয়েছেন। নগর কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাধ্যতামুলক টিকা গ্রহণের চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল গত শুক্রবার। নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত করোনা টিকা না নেওয়ায় ১ হাজার ৪ শত ৩০ জন কর্মচারিকে চাকুরিচ্যুত করেন নগর কর্তৃপক্ষ। নিউ ইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের কার্যাল্যের সূত্রে এ খবর জানা গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, কর্মচ্যুতদের সংখ্যা ৩৭০,০০০ জনশক্তি সম্পন্ন সিটির ১৫% এর কম। সিটি প্রশাসন গত শুক্রবার পর্যন্ত সিটির কর্মচারিদের ভ্যাকসিন নেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল। সিটির জনশক্তির মধ্যে ভ্যাকসিন না নেওয়া আরও যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী রয়েছেন, যারা তাদের চাকুরিচ্যুতির আশঙ্কা করছেন। ভ্যাকসিন গ্রহণ না করলে চাকুরি হারাতে হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন নবনির্বাচিত মেয়র এরিক অ্যাডামস।
সাবেক মেয়র গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং তার ঘোষণার প্রতি জোরাল সমর্থন ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। বাইডেন প্রশাসনে এ সিদ্ধান্ত ছিল ফেডারেল কর্মচারিদের জন্য। এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন গ্রহণে অনিচ্ছুকরা বিষয়টি আদালতে নিয়ে গেলে আদালত এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই বলে রায় দেয়, যে রায়ের ভিত্তিতে সিটি কর্মচারিদের যারা ভ্যাকসিন নিতে রাজি নন, তারা ছাড় পেয়ে যাবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি, বিষয়টি এখন সিটির অসংখ্য কর্মীর রুটিরুজি ওপর আঘাত হিসেবে আসতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সিটিতে তীব্র বিরোধিতার মুখে ভ্যাকসিন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে সংশ্লিষ্ট সিটি প্রশাসনগুলো পিছু হটলেও নিউ ইয়র্কের ক্ষেত্রে সিটি মেয়র চাপের মুখেও ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার ওপর অটল থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছু হটেননি। এমনকি আদালতে মামলা দায়ের হলেও ধোপে টিকেনি ভ্যাকসিন বিরোধী তৎপরতা। অরিগন স্টেটের সবচেয়ে বড় সিটি পোর্টল্যান্ডে সেখানকার পুলিশ ইউনিয়ন ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে পুলিশ প্রশাসনকে শেষ পর্যন্ত ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন না করে ভ্যাকসিন নেওয়া সংশ্লিষ্টদের ঐচ্ছিক ব্যাপার বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। লাস ভেগাসে ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে চাপে মুখে গত জানুয়ারি মাসে সেখানে ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট তুলে নেওয়া হয় এবং পুলিশ বিভাগে নতুন পুলিশ অফিসার নিয়োগে লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য ভ্যাকসিন নেওয়ার আবশ্যকতা নেই বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
১,৪৩০ কর্মীর চাকুরিচ্যুতি সম্পর্কে ওয়াশিংটন একাসমিনার এর পক্ষ থেকে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়রের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিন্তু মেয়র অফিস জানিয়েছেন যাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে, তারা ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে অথবা ভ্যাকসিন না নেওয়ার যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সিটি প্রশাসন এর আগের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পর্যন্ত চাকুরিচ্যুত অধিকাংশ কর্মীকে ছুটিতে রেখেছিল, কিন্তু অনেকের চাকুরি আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বহাল রযেছে।
এখন যারা চাকুরিচ্যুত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের কর্মি বলে জানা গেছে। চূড়ান্ত সময়সীমা ঘনিয়ে আসার আগেই কিছুসংখ্যক শিক্ষক ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকেছেন এবং তারা ভ্যাকসিন না নেওয়ার পক্ষে ধর্মীয় কারণ প্রদর্শন করেছেন, যা আদালত গ্রাহ্য করেনি। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রীম কোর্ট তাদের যুক্তিকে খারিজ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিউ ইয়র্ক সিটির প্রায় ৩,০০০ কর্মী চাকুরিচ্যুত হতে পারেন। ওয়াশিংটন ডিসি’র মেয়র মুরিয়েল বাউজার গত সোমবার সিটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেশনের প্রমাণ প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন।
Discussion about this post