মহান শহীদ এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল। স্থানীয় সময় সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত “ ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং অমর একুশের চেতনা নিউ ইয়র্কের মূলধারায় সুপরিচিত করার প্রয়াসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির সম্মিলনে এই আন্তর্জাতিক দিবসটি উদযাপিত হয়। ইউনেস্কো ঘোষিত এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বহুভাষায় জ্ঞানার্জনঃ সংকট এবং সম্ভাবনা”। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামসহ কনস্যুলেটের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কনুস্যলেটে অস্থায়ী নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। ৫২’র সকল মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর নির্মিত একটি প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য কনসাল জেনারেল ড. ইসলাম ৫২’র মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে, সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরন করেন ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ভূমিকা ও অবদানের কথা। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির মাধ্যমে ২১শে ফেব্রুয়ারী আজ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিস্তৃত করছে উল্লেখ করে তিনি পৃথিবীর সকল বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহবান জানান। অমর একুশের চেতনা বিভিন্ন ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যেকার বন্ধুত্ব ও যোগসূত্রকে আরো জোরদার করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ক্রমান্বয়ে তা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত সফলতা অর্জনের বিষয়ে আলোকপাত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে তা বর্ণনা করে মন্ত্রী সকলকে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে একতাবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব।
কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ভিডিওবার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেলগণ (থাইল্যান্ড, পেরু, বুলগেরিয়া, ভারত) তাদের মাতৃভাষায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের পাশাপাশি (এস্তোনিয়া, পেরু, বুলগেরিয়া এবং ভারতের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করা হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’র মাহেন্দ্রক্ষণে অনুষ্ঠিত অমর একুশের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশী-আমেরিকান নাগরিকবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, নতুন প্রজন্ম, কমিউনিটি সদস্যসহ দেশ-বিদেশের বিপুল সংখ্যক দর্শক-শ্রোতা ভার্চুয়ালী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে ৫২’র সকল মহান ভাষা শহিদদের, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, ৭১-এর সকল শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানটি কনস্যুলেটের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। নিউ ইয়র্কে করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীর কারণে স্বাগতিক দেশের বিধি-বিধান প্রতিপালন করে কনস্যুলেটে এই দিবসটি পালন করা হয়।
Discussion about this post