নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বারইপাড়া খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নৌযানের ধাক্কায় নবগঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর একটি পিলার একাধিকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় সেতুর ওই পিলারের কাজ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল দুই বছর তিন মাস। তবে চার বছরেও সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। সেতুসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পিলারের কাজ বাদে মূল সেতুর কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। নতুন করে নকশা তৈরি করে পিলারটির কাজ করা হবে। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর একটি বালুবোঝাই নৌযান নির্মাণাধীন সেতুর ৯ নম্বর পিলারে আঘাত করলে পিলারটি হেলে যায়। এর আগে ২০২০ সালের ২০ জুন আরেকটি নৌযানের ধাক্কায় একই পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৯ নম্বর পিলারটিতে ছয়-সাতবার নৌযানের ধাক্কা লেগেছে। ধাক্কায়
কয়েকটি নৌযান ডুবেও গেছে। সেতুর অন্য কাজ চললেও ক্ষতিগ্রস্ত ওই পিলারের ওপর স্প্যান বসানো হচ্ছে না। নড়াইল সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সেতু নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম ডি জামিল ইকবাল অ্যান্ড মো. মঈন উদ্দিন বাশি জেভি ফার্ম। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৫১ দশমিক ৮৩ মিটার (২১৩৮ ফুট) ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার (৩৩ ফুট)। সেতুটির উভয় পাশে তিন ফুট করে মোট ছয় ফুট ফুটপাত থাকবে। এ ছাড়া উভয় পাশে ৮০০ মিটার সংযোগ সড়ক হবে। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন। কিন্তু দুবার মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিসি গার্ডারের (কংক্রিট) এ সেতুর ১৬টি পিলারের মধ্যে ১৩টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পিলারটিসহ তিনটি পিলারের কাজ এখনো বাকি। ১৫টি স্প্যানের মধ্যে ইতিমধ্যে তিনটি স্প্যান বসানো হয়েছে। উভয় পাশে সংযোগ সড়কে বালু ভরাটের কাজ শেষ হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক (ডিপিএম) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে ও বর্ষায় স্রোতের তীব্র বেগ থাকায় কাজ বন্ধ ছিল। তাই কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। জুনের মধ্যে মূল সেতুর সব কাজ ও সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হবে বলে আশা করি। তবে যে পিলারটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’নড়াইল সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ এম আতিকউল্লাহ বলেন, বারবার সেতুর ওই পিলারটিতে নৌযানের ধাক্কা লেগেছে। এ বিষয়ে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সওজের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর একটি কারিগরি দল নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পিলারটি দেখতে যান। এরপরে এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। বারবার একই জায়গায় ধাক্কা লাগায় ওই অংশটি আরও প্রশস্ত করে পিলার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ধাক্কা লাগলেও যাতে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে আধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। তাই ৯ নম্বর পিলার এলাকার জন্য নতুন করে নকশা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নকশা হাতে পেলে ওই অংশের কাজ শুরু হবে।
উজ্জ্বল রায়
জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
Discussion about this post