মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা সিনেটর চাক শুমার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রমী। তাই বাংলাদেশি সমাজের মানুষদের তিনি খুব ভালবাসেন। স্থানীয় সময় গতকাল উডসাইডের গুলশান ট্যারেস পার্টি হলে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (হারুন-ফাহাদ) আয়োজিত অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে এসব কথা বলেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন জেবিবিএ’র অন্যতম পরিচালক এম কে রহমান। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরবর্তীতে নতুন কর্মকর্তাদের শপথবাক্য পাঠ করান জেবিবিএ’র পরিচালক মন্ডলীর প্রধান ও সাবেক সভাপতি ও আহবায়ক মোহাম্মদ পিয়ার।
অনুষ্ঠানে জেবিবিএর নয়া কমিটির কর্মকর্তাগণকে সিনেটরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান। এ সময় বক্তব্য রাখেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জেবিবিএ’র উপদেষ্টা এটর্নী মঈন চৌধুরী এবং সিটি মেয়র অফিসের ডেপুটি কমিশনার চৌহান। জেবিবিএ’র সভাপতি হারুন ভূইয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি মনসুর চৌধুরী, সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলম নমী এবং মোহাম্মদ আজাদ, কোষাধ্যক্ষ সেলিম হারুন, উপদেষ্টা মইনুল ইসলাম, ডা. তৌহিদ শিবলী, সারোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মীর নিজামুল হক প্রমুখ এসময় মঞ্চে ছিলেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো এবং জেবিবিএ’র পক্ষ থেকে ক্রেস্ট দেয়া হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ এবং জেসিকা গঞ্জালেজ, সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণানন, কমিউনিটি বোর্ড সভাপতি ফ্যাঙ্ক, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ও বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ আলী ও আহসান হাবিব এবং মোহাম্মদ পিয়ার প্রমুখ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে সিনেটর চাক শুমার বলেন, আমার পূর্ব পুরুষরা ক্ষুদ্র ব্যবসা করতো। অনেকেই নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ছোট-মাঝারি বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। নিউ ইয়র্ক সিটির ক্যাব (ট্যাক্সি) ড্রাইভারের বড় একটি অংশ হচ্ছেন বাংলাদেশি। তারা যাতে অধিক উপার্জনে সক্ষম হন সে জন্য আমি সব সময় সরব থাকি। কারণ, আমার শ্বশুর ক্যাব ড্রাইভার ছিলেন। তাই আমি জানি কতটা কষ্ট করতে হয় ড্রাইভারদের। তিনি বলেন, আমার বাবা ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাকেও সারাটি জীবন কঠোর শ্রম দিতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
সিনেটর চাক শুমার বলেন, ভিন্ন ভাষা এবং কালচারের লোক হওয়া সত্বেও অনেক দূর থেকে আপনারা এই আমেরিকায় এসেছেন কারণ, আপনারা নিজের জীবনকে সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে তুলতে চান এবং সন্তানদের ভবিষ্যত সুন্দর করতে চান। আর এজন্য সকলকে অনেক বেশী শ্রম ও মেধার বিনিয়োগ ঘটাতে হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই আপনারা জ্যাকসন হাইটসকে উন্নত করছেন, কুইন্সকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন, নিউইয়র্ককে উন্নত থেকে উন্নতর করছেন। এভাবেই আমেরিকাকেও উন্নত করছেন।
সিনেটর শুমার বলেন, করোনায় বিপর্যস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াতে আমি পিপিপি (পে-চেক প্রটেকশন প্রোগ্রাম) লোন বিল লিখেছি এবং সিনেটে তা পাশ হয়েছে। এর লোন কখনোই ফেরৎ দিতে হবে না যদি শর্ত অনুযায়ী ব্যয় করা হয়। আমার ধারণা, বাংলাদেশীরাও সেই অর্থ-সহায়তা পেয়েছেন। এ সময় সকলেই জানান যে, তারা সেই অর্থ পেয়েছেন। বাংলাদেশি-আমেরিকান নুসরাত চৌধুরীকে ফেডারেল জজ হিসেবে নিয়োগের কথা উল্লেখ করে সিনেটর চাক শুমার বলেন, কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশীদের কল্যাণে আমি সবকিছু করতে বদ্ধ পরিকর।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নৈশ ভোজ আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন, চন্দন চৌধুরী, কামরুজ্জামান বকুল, রোকশানা মির্জা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শিল্পীদের বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গত করেন মাটি ব্যান্ডের বাদ্যযন্ত্রীরা।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন মোহাম্মদ আলম নমী, রুহুল আমীন সরকার ও সোনিয়া।
Discussion about this post