যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পর এবার নিউ ইয়র্কের স্কুলগুলোতে শিগগির বন্ধ হচ্ছে চকলেট মিল্ক সরবরাহ। নিউ ইয়র্কের নতুন মেয়র এরিক অ্যাডামস এ উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি সিটি হলের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই পাবলিক স্কুল থেকে চকলেট দুধ নিষিদ্ধ করার আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
সুস্থ জীবনযাপনের প্রচারক এই মেয়র এখন আবার তার মনোযোগ লাঞ্চ-রুমের প্রধান অংশের দিকে ঘুরিয়েছেন এবং রাজ্যের শক্তিশালী দুগ্ধ শিল্পের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অ্যাডামস গত জানুয়ারিতে বলেন, ‘আমাদের স্কুলে কি শিশুদের চকলেট (উচ্চ চিনিযুক্ত) দুধ খাওয়া উচিত?- বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এখন, আমি আয়া মেয়র হতে যাচ্ছি না। কিন্তু আমাদের সন্তানদের বিকল্প থাকতে হবে।’
অ্যাডামসই প্রথম কর্মকর্তা নন যার এই ধারণা রয়েছে। ওয়াশিংটন এবং সান ফ্রান্সিসকোর শহরগুলো ইতিমধ্যে চকলেট দুধ নিষিদ্ধ করেছে। এক দশক আগে ক্যাফেটেরিয়া থেকে চকোলেট দুধ সরিয়ে ফেলার জন্য দেশের প্রথম বড় স্কুল ডিস্ট্রিক্ট হয়ে ওঠে লস অ্যাঞ্জেলেস।
অ্যাডামস এখনো নিউ ইয়র্ক সিটি স্কুলে চকলেট দুধ শেষ করার জন্য একটি আক্রমণাত্মক ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
দেশের অন্যতম বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদনকারী রাজ্য নিউইয়র্কে শুধুমাত্র চিনিযুক্ত পানীয়ের বিপদ সম্পর্কে আলোচনা ওঠায় নিউইয়র্কজুড়ে কৃষকরা ভড়কে গেছেন।
দুগ্ধশিল্প সম্ভবত এই ধরনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং গভর্নর ক্যাথি হোচুলের সহানুভূতিও পেতে পারে। কারণ হোচুল ইতিমধ্যেই স্কুলের মধ্যাহ্নভোজকে একটি কৃষি সমস্যা হিসেবে দেখা শুরু করেছেন।
নিউইয়র্ক ফার্ম ব্যুরোর পাবলিক পলিসির ডেপুটি ডিরেক্টর এলিজাবেথ ওল্টারস সতর্ক করে দেন, ‘শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের পছন্দ অনুযায়ী সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে কিনা- তা আমাদের নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট হিসেবে, অ্যাডামস ২০১৯ সালে তার পূর্বসূরি বিল ডি ব্লাসিওর উত্থাপিত স্কুলে চকলেট দুধ নিষিদ্ধ করার একটি প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। তিনি ডি ব্লাসিওর শিক্ষা বিভাগকে একটি পাইলট প্রোগ্রাম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন যা স্কুলে ননডেইরি দুধ নিয়ে আসবে, কিন্তু প্রস্তাবটি কখনো কার্যকর হয়নি।
শিল্প গ্রুপ মর্নিং কনসাল্ট ও ইন্টারন্যাশনাল ডেইরি ফুডস অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির ভোটারদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতারা স্কুলে কম চর্বিযুক্ত, স্বাদযুক্ত দুধের সমর্থন করেন। ১৬ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জরিপ করা নমুনাটিতে ৭৪৭ জন সিটি ভোটার রয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই অভিভাবক।
গত মাসে একটি বাজেট শুনানিতে একজন আইনপ্রণেতা বলেন, স্কুলে বাচ্চাদের কী খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে অ্যাডামসের মতামত দুগ্ধ চাষীদের সাথে দ্বন্দ্বে পরিণত হতে পারে। তবে শিশু পুষ্টির উন্নতিতে তার উৎসর্গ তাকে রাজ্যের কৃষি খাতের জন্য একটি ‘ভাল নতুন অংশীদার’ করে তুলেছে।
আলবেনিতে আপস্টেট আইন প্রণেতারা নিয়মিত স্কুলে চকলেট দুধ অপসারণের যেকোনো প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন। অ্যাসেম্বলি সদস্য ডোনা লুপার্দো (ডি-ইউনিয়ন) সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কৃষি কমিটির সভাপতি হিসেবে, আমি নিউইয়র্ক ডেইরির একজন উকিল। আমি শিক্ষার্থীদের জন্য দুধের বিকল্প সীমিত করা সমর্থন করি না।’
চকলেট মিল্ক কি আসলেই শিশুদের জন্য খারাপ? ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে দুগ্ধজাত খাবারের ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করেছেন – যা জীবনের প্রথম দিকে শুরু হয়। ফিজিশিয়ানস কমিটি ফর রেসপন্সিবল মেডিসিনের মতে, আমেরিকান ডায়েটে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের জন্য দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যগুলো সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। চকলেট দুধে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাটও হৃদরোগের একটি বড় কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সয়া দুধের মতো বিকল্প, কোলেস্টেরল এবং স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসের মতো প্রকৃত স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
রেসপনসিভ মেডিসিন ফর ফিজিশিয়ানস কমিটি ফর প্রিভেনটিভ মেডিসিনের পরিচালক জোশ কুলিমোর বলেন, ‘ডায়েটে দুধ সত্যিই প্রয়োজনীয় নয় এবং আপনি যখন চকলেট দুধে চিনি যোগ করেন, তখন এটি আরও বেশি অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। তাই আমি মনে করি এটি একটি ভালো দিক হবে। এমনও ভালো প্রমাণ আছে যে দুগ্ধজাত খাবার ব্রণের ঝুঁকি বাড়ায়, যা কিশোর-কিশোরীরা স্পষ্টতই এড়িয়ে চলতে চায়।’
Discussion about this post