জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে প্রতিবারের মতো এবারও ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উদযাপন করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার (১৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানটির শুরুতে মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদসহ এ সরকারের প্রয়াত সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ এর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অত:পর দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শুনানো হয়। মুজিবনগর সরকারের উপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও প্রদর্শন করা হয় অনুষ্ঠানটিতে। এ খবর জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস।
মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য ও নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরে অনুষ্ঠানটিতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। তিনি বলেন, “জাতির পিতার নেতৃত্বে ২৩ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম বাঙালি জাতিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল আর ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বাঙালি জাতি নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে শুরু করে। ঠিক সেসময়ে ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের নামে পাকিস্তানী বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। পরবর্তীতে ২৬ মার্চে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে। ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিব নগর সরকার ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি ও আইনগত ভিত্তি স্থাপনে মুজিবনগর সরকারের কোন বিকল্প ছিলনা”।
মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্ব, কৌশল ও সময়োপযোগী দিক-নির্দেশনার ফলে মুক্তিযুদ্ধ দ্রুততম সময়ে সফল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায় মর্মে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “মুজিবনগর সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে বিশ্ব জনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে আনা যা তারা অত্যন্ত সফলতার সাথে করতে পেরেছিল। এই সরকার বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পক্ষে আনতে বেশ কিছু সময়োযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাকিস্তানী দূতাবাসে কর্মরত বাঙালি কূটনীতিকরা যেন দ্রুত পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেন, সে উদ্যোগ গ্রহণ করে”।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মাঝে মুজিবনগর সরকারের ইতিহাস, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে আমরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যাবো, মুজিবনগর দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার”।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন আলোচকগণ। মুজিব নগর দিবসের এই অনুষ্ঠানে মিশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি অংশগ্রহণ করেন।
Discussion about this post