দেশে ফিরেছেন হাজী সেলিম

তির দায়ে দশ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে আজ দেশে ফিরেছেন।

তার একান্ত সচিব মহিউদ্দিন মাহমুদ বেলাল জানান, আজ বৃহস্পতিবার(৫ মে) বেলা সোয়া ১২টায় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে পৌঁছান পুরান ঢাকার লালবাগের এই সংসদ সদস্য।

বেলাল বলেন, “এয়ারপোর্ট থেকে উনি সরাসরি ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে খাজা দেওয়ান জামে মসজিদে গিয়ে একজন কর্মীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন। পরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাসায় ফিরবেন। উনার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো।”

হাজী সেলিম কখন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন জানতে চাইলে বেলাল বলেন, “এটা একেবারেই আইনজীবীর ওপর নির্ভরশীল। আইনজীবী যখন বলবেন, তখন যাবেন।”

‘অবৈধ সম্পদ’ অর্জনের অভিযোগে দুই যুগ আগের একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্ট তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী ঈদের পর তিনি আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী।

কিন্তু ঈদের আগে ৩০ এপ্রিল সেলিম থাইল্যান্ডে গেলে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়। আত্মসমর্পণ না করে তিনি পালালেন কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবি খুরশীদ আলম খান সোমবার বলেন, “হাজী সেলিমের দেশত্যাগের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। উনি কীভাবে যেতে পারলেন তা আমাদের প্রশ্ন। উনি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তার যাওয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই। উনার তো আদালতে আত্মসমর্পন করার কথা ছিল।”

তবে সেলিমের ব্যক্তিগত সচিব বেলাল বলেছিলেন, “স্যার চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক গিয়েছেন।… ট্রিটমেন্ট শেষে, ৫ তারিখে দেশে ফিরবেন। উনি কেন পালাবেন? দেশে এসে তিনি আত্মসমর্পণ করবেন। আইনের প্রতি স্যার শ্রদ্ধাশীল। আত্মসমর্পণের আগে ট্রিটমেন্ট করে নিচ্ছেন।”

দুদক-এর করা ‘অবৈধভাবে সম্পদ’ অর্জনের যে মামলায় হাজী সেলিমের সাজা হয়েছে সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর- সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

পাশাপাশি জ্ঞাত আয় সম্পদ অর্জনে ‘সহযোগিতার’ অভিযোগে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

হাজী সেলিম এবং তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে।

ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

সেই শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।

আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী হাজী সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টমণ্ডলীতে রয়েছেন। বিগত কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন।

তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

তার বিদেশযাত্রার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, “তার দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ফলে তিনি স্বাভাবিকভাবে গেছেন এবং ফিরেছেন। হাজী সেলিমের সাজা এবং বিদেশের যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।”

সূত্র : দৈনিক আজাদী