মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোথাও স্কুলে গণহত্যার ঘটনা দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ক্রিস মারফি। এরকম ঘটনা আমরাই বেছে নিয়েছি। এটি চলতে দেওয়াও আমাদের বেছে নেওয়া। মঙ্গলবার সিনেটে আইনপ্রণেতাদের পদক্ষেপ নিতে আবেগী আহ্বান জানান সিনেটর ক্রিস মারফি।
মঙ্গলবার এই বিতর্কে সপ্তাহের শেষ দিকে আরও তীব্র হতে যাচ্ছে। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বন্দুকপন্থী লবি ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন টেক্সাসের হিউসটনে বার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করছে।
এই আয়োজনে অনেক প্রখ্যাত রিপাবলিকান রাজনীতিবিদের বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট, টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। দ্রুত এর সমালোচনা করে টেড ক্রুজ বলেন, ‘মানুষ মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে বন্দুক রাখার অধিকারকে আক্রমণ করতে বন্দুক হামলাকে ব্যবহার করবে। তিনি বলেন, ‘যখন এই ধরনের অপরাধ হয়, তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা রাজনীতিতে পরিণত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে আরও একবার নির্বিচার গুলিবর্ষণে ১৯ শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় মার্কিন রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ বাড়ছে, সবার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে। তবে এতে খুব সামান্য কিংবা একেবারেই কোনও পরিবর্তন না আসারও আশঙ্কা সামনে এসেছে। কারণ দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই এই বিতর্ক চলছে এবং প্রতিটি বন্দুক হামলার পর সংবাদমাধ্যম, রাজনীতিক ও অ্যাডভোকেসি গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবিতে সোচ্চার হয়। প্রতিবারই কিছুদিন পর ইস্যুটি চাপা পড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম খুব একটা আশা করা হচ্ছে না।
এভরিটাউন বন্দুক নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ জানিয়েছে, এই বছর এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আটটি বন্দুক হামলা হয়েছে। নিউ ইয়র্কের সুপার মার্কেটে ১০ আফ্রিকান আমেরিকানকে হত্যার দশ দিনের মাথায় নতুন করে স্কুলে হামলার ঘটনা ঘটলো।
দশ বছর আগে কানেক্টিকাটের নিউটাউনে স্যান্ডি হুক প্রাথমিক স্কুলে এক হামলায় ২০ শিশু এবং আরও ছয় জন নিহত হন। এছাড়া চার বছর আগে ফ্লোরিডার এক মাধ্যমিক স্কুলে ১৭ জন নিহত হন। তবে এসব বড় বড় হামলার পরও বন্দুক কেনার প্রক্রিয়া ও এর মালিকানায় তাৎপর্যপূর্ণ কোনও পরিবর্তন আসেনি।
বিরক্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতীয় শোকের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় বলেন, ‘আশা করেছিলাম, যখন রাষ্ট্রপতি হবো, তখন আমাকে আর এই কাজ করতে হবে না।’ মার্কিন বন্দুক লবিকে পরাস্ত করার এবং বন্দুকের মালিকানা আইন কঠোর করার একটি উপায় খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
বাইডেন বলেন, ‘আরেকটি গণহত্যা… এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সুন্দর, নিষ্পাপ, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমি অসুস্থ ও খুব ক্লান্ত। আমাদের কাজ করতে হবে। আর আমাকে বলবেন না যে, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের ওপর প্রভাব ফেলতে পারি না।’
বাইডেন এমন এক সময়ে এসব কথা বলছেন যখন যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের বন্দুক, বিশেষ করে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যাসল্ট রাইফেল এবং সেমি অটোমেটিক পিস্তল যেকোনও সময়ের তুলনায় সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
পাশাপাশি, মঙ্গলবারের হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার আবারও বন্দুক, জননিরাপত্তা এবং অধিকার নিয়ে অতি-পরিচিত যুক্তি ও বিতর্ক সামনে আসতে শুরু করেছে।
বন্দুক হামলা ‘রাজনৈতিক’?
এই বিতর্ক এ সপ্তাহের শেষ দিকে আরও তীব্র হতে যাচ্ছে। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বন্দুকপন্থী লবি ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন টেক্সাসের হিউসটনে বার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করছে।
এই আয়োজনে অনেক প্রখ্যাত রিপাবলিকান রাজনীতিবিদের বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট, টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ।
মঙ্গলবার সিনেটে আইনপ্রণেতাদের পদক্ষেপ নিতে আবেগী আহ্বান জানান কানেক্টিকাটের সিনেটর ক্রিস মারফি। তিনি বলেন, ‘এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোথাও এরকম ঘটে না এবং তা আমরাই বেছে নিয়েছি। এটি চলতে দেওয়াও আমাদের বেছে নেওয়া।’
দ্রুত এর সমালোচনা করে টেড ক্রুজ বলেন, ‘মানুষ মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে বন্দুক রাখার অধিকারকে আক্রমণ করতে বন্দুক হামলাকে ব্যবহার করবে। তিনি বলেন, ‘যখন এই ধরনের অপরাধ হয়, তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা রাজনীতিতে পরিণত হয়।’
বেশি বন্দুক, বেশি হামলা:
তবুও তথ্য বলছে ‘বন্দুক অপরাধের’ ভয়াবহ জাতীয় মূল্য দিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। গত সপ্তাহে মার্কিন জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানিয়েছে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় নিহতের সংখ্যা ‘ঐতিহাসিকভাবে’ বেড়েছে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ১৯ হাজার ৩৫০ জন খুন হন, যা ২০১৯ সাল থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি।
এভরিটাউন জানিয়েছে, নির্বিচার হামলার সংখ্যাও বেড়েছে। গ্রুপটি বলেছে, ‘২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২৭৪টি নির্বিচার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এগুলোতে এক হাজার ৫৩৬ জন গুলিবিদ্ধ ও নিহত হয়েছেন এবং ৯৮৩ জন গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন।
দেশটি বন্দুকের দাপটে ভাসছে। মার্কিন আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাতারা ২০০০ সাল থেকে দুই দশক ধরে বাণিজ্যিক বাজারের জন্য ১৩৯ মিলিয়নেরও বেশি বন্দুক উৎপাদন করেছে এবং দেশটি আরও ৭১ মিলিয়ন আমদানি করেছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যাসল্ট রাইফেল। পাঁচশ’ ডলারে কেনা যায় এই অস্ত্র। এছাড়া অতি নির্ভুল এবং সেমি অটোমেটিক ৯ মিলিমিটার পিস্তল পাওয়া যায় দুইশ’ ডলারের কম দামে।
টেক্সাসে বন্দুক আইন শিথিল:
প্রত্যেকটি ঘটনার পর অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনপ্রণেতারা বন্দুক আইন কঠিনের প্রস্তাব তোলেন কিন্তু তাদের রক্ষণশীল সহকর্মীরা সেসব প্রত্যাখ্যান করেন। এই রাজনীতিবিদরা বন্দুক নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতাকারী জনসাধারণের একটি বড় অংশের ভোটের সমর্থনের ওপর নির্ভর করে থাকেন।
গত বছর পিউ পোলের এক জরিপে বলা হয়, মাত্র ৫৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক কঠোর বন্দুক আইন চান। আর মাত্র ৪৯ শতাংশ মনে করেন কঠোর আইনে নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনা কমবে।
অন্যদিকে, গ্রেগ অ্যাবোটের মতো রাজনীতিবিদরা নিয়ন্ত্রণ শিথিলের কথা বলছেন। গত বছর টেক্সাসের গভর্নর একটি আইনে সই করেছেন। এতে ১৮ বছরের বেশি যেকেউ লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই প্রকাশে হ্যান্ডগান নিয়ে চলতে পারবে।
এভরিটাউনের অ্যাক্টিভিস্ট শাখা মামস ডিমান্ড’র প্রতিষ্ঠাতা শ্যানন ওয়াটস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বন্দুকের বাজার টেক্সাস। এই অঙ্গরাজ্যটিতে বন্দুকে মৃত্যুর হারও অনেক বেশি।
শ্যানন ওয়াটস বলেন, যদি বেশি বন্দুক এবং কম আইনের কারণে টেক্সাস বেশি নিরাপদ হয়, তাহলে এটার হওয়া উচিত সবচেয়ে নিরাপদ অঙ্গরাজ্য এবং বন্দুক সহিংসতার হার কম হওয়ার কথা। কিন্তু অঙ্গরাজ্যটিতে বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা এবং হত্যার হার বেশি এবং দেশের ভয়াবহ দশটি নির্বিচার গুলিবর্ষণের মধ্যে ৪টি এখানেই ঘটেছে।
নোমান ইবনে সাবিত/বিপি, নিউ ইয়র্ক
Discussion about this post