আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: সিলেট ও সুনামগঞ্জে অন্তত ১০ লাখ মানুস পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেট শহর সহ আশপাশ উপজেলায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন ওবার্ড সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার(১৬জুন) সকাল ৯টা থেকে সিলেট জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৯৯ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৩ সেন্টিমিটার এবং সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার শূন্য দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর বাইরে জেলার ছোট ছোট অন্যান্য নদীর পানিও ক্রমশ বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট নগরের ২০ থেকে ৩০টি এলাকা ছাড়াও জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিশ^নাথ ও সিলেট সদর উপজেলার অন্তত ১ হাজারেরও বেশী গ্রাম এরই মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলারও হাজারের উপরে গ্রাম পানির নিচে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। এসব এলাকার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বেসরকারি কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে অসংখ্য জনপদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুত উপকেন্দ্রে পানি উঠায় কোম্পানিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সিলেট ও সুনামগঞ্জে অন্তত ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় অন্তহীন দুর্ভোগে দিন পার করছেন। এ সংখ্যা আরো বেশীও হতে পারে।
এদিকে, বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগও নেই। বন্যার পানিতে অসংখ্য পরীক্ষাকেন্দ্র ডুবে যাওয়ায় সেখানে পরীক্ষা কী ভাবে নেওয়া হবে,তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। জেলা ও উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকার কারণে এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বোর্ডের অধীন থাকা চার জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে বন্যাকবলিত জেলা সিলেটে ৪৩ হাজার ৮৪৪ জন ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫২ জন পরীক্ষার্থী আছে। ৪ জেলায় ১৪৯টি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৫৯টি ও সুনামগঞ্জে ৩৩টি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। তবে বন্যা পরিস্থিতিতে কী পরিমাণ পরীক্ষাকেন্দ্র প্লাবিত হয়েছে কিংবা কতসংখ্যক পরীক্ষার্থী পানিবন্দী আছে এ পস্থিতিতে পরিক্ষা নেওয়া দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে।
এদিকে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশেদ বলেন, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৩০টি বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইওে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, সেগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
সিলেটের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৬০৭টি উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত হয়েছে ১৫০টি। এর মধ্যে ১৩৭টিতে বন্যায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এর বাইরে ৫৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় সেখানেও পাঠদান বন্ধ আছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। সুনামগঞ্জে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে হয়েছে ১৮০ মিলিমিটার। একই সঙ্গে উজান থেকে নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে জেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
এদিকে, সিলেটে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৯ জুন ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া বাকি দিন গুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
Discussion about this post