ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘পরাণ’ সিনেমা নিয়ে ক্ষুব্ধ রিফাত হত্যা মামলার বাদী ও আসামি পক্ষের পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন, পরিবারের অনুমতি না নেয়া, আইনগত কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই সিনেমা নির্মাণসহ নানা বিষয় নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সিনেমাটির বিরুদ্ধে আলাদা আলাদাভাবে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা।
নিহত রিফাত শরিফের বাবা দুলাল শরিফ বলেন, তিনি তার ছেলে নিহত রিফাতকে হত্যার চাঞ্চল্যকর বিষয়টি নিয়ে সিনেমা নির্মাণের কথা জেনেছেন কয়েক বছর আগেই। তখন তিনি ভেবেছিলেন নির্মাতা অবশ্যই সিনেমা নির্মাণের জন্য তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তারা ঘটনা ও ঘটনার ভেতরের কথাগুলো শুনবেন। তবে এখন জানতে পেরেছেন সিনেমা নির্মাণ শেষ। মুক্তির অপেক্ষায় আছে। তাদের অনুমতি নেয়া তো দূরে থাক, একবারও সিনেমা নির্মাতা কথাও বলেননি তাদের সঙ্গে।
এরই মধ্যে সিনেমাটির ট্রেইলার বের হয়েছে। সেটা দেখে সবাই বলছেন রিফাত হত্যাই এই সিনেমার মূল কাহিনী। অথচ রিফাতের বাবা হয়েও দুলাল শরিফ জানেন না রিফাতকে সেখানে কীভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে অবশ্যই মামলা করবো।’
সিনেমাটির বিষয়ে নির্মাতা রায়হান রাফি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘একটি সত্য ঘটনা থেকে তিনি উৎসাহ পেয়েছেন পরাণ সিনেমা নির্মাণের। তবে সিনেমাটি বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড বা মিন্নিকে নিয়ে নয়।
তাহলে এই সিনেমা নিয়ে এত উৎকণ্ঠা কেন, জানতে চাইলে রিফাতের বাবা দুলাল শরিফ বলেন, কয়েক বছর আগে যখন সিনেমাটি নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয় তখন নির্মাতা নিজেই বলেছেন ‘পরাণ’ নামে তিনি যে সিনেমা নির্মাণ করবেন তা বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এ বিষয় গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে অনেক। সে কারণেই ‘পরাণ’ সিনেমা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এখন সে সিনেমায় ভিন্ন গল্প বা সত্য ঘটনাকে আড়াল করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে মানুষ ভাববে এটাই ছিল সত্য ঘটনা। যা তিনি কখনোই মেনে নেবেন না। মামলার প্রস্তুতি হিসেবে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেও রেখেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে আলোচিত রিফাতের স্ত্রী মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানিয়েছেন, তার আইনজীবী জেড আই খান পান্না তাকে নিশ্চিত করেছেন মিন্নি চরিত্রকে অবলম্বন করে সিনেমার মাধ্যমে বাজে কিছু উপস্থাপন করা হলে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে। বিচার চলাকালীন একটি বিষয়কে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
অন্যদিকে মামলায় এক কিশোর অপরাধীর বাবা মনির খান বলেন, ‘মামলায় কিশোরদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। ঘটনার সময় উৎসুক অন্য সাধারণ মানুষের মতোই দাঁড়িয়ে ছিল। আদালত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে গিয়ে তাদেরও সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছে। যা উচ্চ আদালতে প্রমাণের চেষ্টায় আছেন তারা। এ সময় একটি সিনেমার মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডকে উপস্থাপন তাদের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শুটিং শেষ হয় পরাণ সিনেমার। যা রিফাত হত্যা মামলার নিম্ন আদালতে রায়েরও আগে। রায় হওয়ার আগেই সিনেমার শুটিং কাজ শেষ হওয়ায় সিনেমার কাহিনী নিয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করছে মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের মধ্যে।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রী মিন্নির উপস্থিতিতে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ওইদিন বিকেলে মারা যান রিফাত।
পরদিন ২৭ জুন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয় মিন্নিকে। পরে পুলিশের অভিযোগপত্রে ৭ নম্বর আসামি হিসেবে নাম আসে মিন্নির।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে ৭৬ জন সাক্ষ্য দেন। এরপর দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করেন।
রায়ে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মামলার বাকি চার আসামিকে দেয়া হয় খালাস।
অন্যদিকে, ১৪ শিশু আসামির মধ্যে ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। বাকি তিনজনকে খালাস দেয়া হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরের ২৭ তারিখ এ রায় ঘোষণা করেন বরগুনা নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান।
মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আাদালতে আপিল করেছেন। যা এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
Discussion about this post