টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার খিলদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া আবির হোসেনের বাবা লাল মিয়া নামের এক অভিভাবকের বিরুদ্ধে।
রোববার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় ওই বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এঘটনায় সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুর ১২ টায় খিলদা উচ্চ বিদ্যালয় ও খিলদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে ওই অভিভাবক লাল মিয়ার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাগুটিয়া বাসস্ট্যান্ড নামক স্থানে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ওই অভিভাবক লাল মিয়া একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। আমরা প্রশাসনের নিকট তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে খিলদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেন বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় রোববার (২৪ জুলাই) অষ্টম শ্রেণীর একটি ক্লাসে যাই ক্লাস করাতে। এসময় সিলিমপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে আবির হোসেনকে চুল বড় রাখার কারণে একটু শাসন করি। পরে বিকেলে আমার এই স্কুলে একটি কোম্পানি টেলিভিশন দিবে বলে স্কুলে অপেক্ষা করতে থাকি। এমন সময় ওই ছাত্রের বাবা লাল মিয়া এসে শাসন করার ঘটনায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ বিষয়টি স্কুলের কয়েকজন প্রাক্তন ছাত্র স্কুল মাঠে থাকায় তারা বিষয়টি দেখতে পায়। তখন তারা এর প্রতিবাদ করলে তাদের ওপরও ক্ষিপ্ত হয় ওই অভিভাবক। এ সময় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ওই অভিভাবককে স্কুলের একটি কক্ষে আটকে রাখে।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, এ ঘটনার বিষয়টি তাৎক্ষণিক আমি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিকে অবগত করি। এরই মধ্যে খবর পেয়ে স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষাথীরা, অন্যান্য অভিভাবকসহ এলাকাবাসী এসে ভিড় জমায় স্কুল প্রাঙ্গণে। এ সময় তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বিষয়টি কালিহাতী থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে বিক্ষোভরত অবস্থায় ওই অভিভাবক লাল মিয়াকে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় রাতেই কালিহাতী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি এবং এঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত।
এ বিষয়ে খিলদা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোন করে জানানোর সাথে সাথে স্কুলে আসি। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মাহমুদুল হাসান দিপুল বলেন, বিদ্যালয়টি ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর আজকে এই প্রথম এমন একটি দুর্ঘটনার মুখোমুখি আমরা হয়েছি। যেটা আমাদের এলাকা, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সর্বোপরি আমাদের সকলকে অত্যান্ত মর্মাহত করেছে। এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, একজন মাদক ব্যবসায়ী কর্তৃক আমাদের এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, যিনি এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রায় দশ বছর যাবৎ তিনি সুনামের সহিত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একটি ছাত্রকে শাসন করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন চিহ্নিত যাদক ব্যবসায়ী প্রধান শিক্ষকের ওপর যে অমানবিক হামলা করেছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
এবিষয়ে কালিহাতী থানার ওসি মোল্লা আজিজুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনার দিন রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত করে অভিযুক্ত অভিভাবক লাল মিয়াকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে খিলদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেন বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে লাল মিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সোমবার (২৫ জুলাই) টাঙ্গাইল আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কামরুল হাসান
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
Discussion about this post