তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার অনেক শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে। কোনো শক্ত দেয়ালে যদি কেউ ধাক্কা দেয় সে নিজেই পড়ে যায়, দেয়াল কিন্তু নড়েও না কিংবা সেই দেয়ালে যদি কেউ মাথা ঠোকে তাহলে মাথা ফেটে যায়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিত অনেক গভীরে প্রোথিত। আসলে আওয়ামী লীগ সরকারকে ধাক্কা দিতে গিয়ে বিএনপি ইতিমধ্যেই পড়ে গেছে। আবার যদি ধাক্কা দিতে যায় তখন আবার পড়ে যাবে, মাথাও ফেটে যেতে পারে।’
রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নবনির্বাচিত পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য সরকারকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া বাকি বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
লোডশেডিং সংক্রান্ত বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবীতে আজকে বিদ্যুতের জন্য, জ্বালানির জন্য হাহাকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে জার্মানিতে কখনো বিদ্যুৎ যায়নি, সেখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে এবং পানি গরম করার বিদ্যুৎ বন্ধ রয়েছে। আমেরিকায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য নাগরিকদের কাছে এসএমএস করা হয়েছে। ফ্রান্সেও একই আহ্বান জানানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলস এবং সিডনিতে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়েছে। স্পেনে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন টাই না পরার জন্য, কারণ টাই পরলে গরম লাগবে, গরম লাগলে এসি বেশি চালাতে হয়।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানির দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম ১০গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এজন্য সমগ্র পৃথিবীব্যাপী বিদ্যুতের রেশনিং করা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী হাছান বলেন, উন্নত দেশে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে আমাদের দেশেও সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বর নাগাদ এ অবস্থা আর থাকবে না।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি এগুলো বোঝে, বুঝেও তারা এরকম কথা বলে। বিএনপির তো এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নাই। কারণ তারা তো মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারে নাই। মানুষ যখন বিদ্যুতের দাবি করেছে, তখন গুলি করে তাদের হত্যা করেছে। বিদ্যুৎ তারা দিতে পারেনি কিন্তু তারেক জিয়ার প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত বিদ্যুতের খাম্বা লাগিয়েছে সারাদেশে। দেখলাম তারা হারিকেন নিয়ে মিছিল করেছে। এর অর্থ দু’টি হতে পারে। একটি হচ্ছে হারিকেন মার্কার মুসলিম লীগ মিলিয়ে গেছে, এখন তারা আবার হারিকেন ধরে মুসলিম লীগ হতে চায় কি না। আরেকটি হচ্ছে, হারিকেনকে যে কোনো সময় পেট্রোল বোমা বানিয়ে ফেলা যায়।
নবম ওয়েজবোর্ড সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে মামলার প্রেক্ষিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সাংবাদিকদের অনুরোধ জানাবো, মালিক পক্ষকে ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করার জন্য বলতে।’
এ সময় সংবাদপত্র মালিক সমিতি-নোয়াবের দৈনিক পত্রিকার মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘নোয়াব বলেছে তাদের অনেক দাবি ছিলো যার বেশকিছু বাস্তবায়িত হয়নি। সব দাবির বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না, সরকারকে সবকিছু মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর সংবাদপত্রগুলো বেসরকারি মালিকানাধীন, তারা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সবার সাথে আলাপ আলোচনা করে বাড়ালে ভালো হতো।’
ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে সিনিয়র সহ-সভাপতি এম এ কুদ্দুস, সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এ জিহাদুর রহমান জিহাদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক এস এম সাইফ আলী, দফতর সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, কল্যাণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান চৌধুরী, নারীবিষয়ক সম্পাদক সুরাইয়া অনু, নির্বাহী সদস্য ইব্রাহীম খলিল খোকন, আসাদুর রহমান, সলিম উল্লাহ সেলিম, আনোয়ার হোসেন, মহিউদ্দিন পলাশ, রেহানা পারভীন, শফিক বাশার, কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ এসময় ডিইউজের ১০ দফা দাবি সম্বলিত একটি পত্র তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
সংশোধনীসহ গণমাধ্যমকর্মী আইন ও নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন, বেতার, টিভি ও অনলাইন গণমাধ্যমকে ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনা, বেতন-ভাতা অপরিশোধিত রাখা পত্রিকাকে সরকারি সুবিধার বাইরে রাখা, পত্রিকার সঠিক প্রচার সংখ্যা নির্ধারণ, সরকারি সকল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে ডিইউজের প্রতিনিধিত্ব, সব গণমাধ্যমে নারীবান্ধব পরিবেশ ও শিশুযত্ন কেন্দ্র রাখা, সাগর-রুনি হত্যার বিচার, সাংবাদিক হয়রানি, মনিটরিং সেল গঠন এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বন্ধ করার দাবি জানান তারা।
সূত্র : সারাবাংলা
Discussion about this post