বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ৫ দফা দাবি জানিয়ে বলেছেন, সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে- ৩১ আগস্ট ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সারাদেশে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরির মালিকরা কর্মবিরতি পালন করে তেলের বিক্রয় ও উত্তোলন বন্ধ রাখবেন। এরপরও তাদের দাবি মানা না হলে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন।
বুধবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক।
তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও ট্যাংক লরি শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ২০০৯ সাল থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে দেন দরবার করে আসছি। মৌখিকভাবে তারা সেটা মেনে নেন, কিন্তু কার্যত করেন না। যতবার আমরা ধর্মঘট কর্মসূচির ডাক দিয়েছি, ততবারই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এই করে ১৩ বছর কেটে গেছে। সব জিনিসের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে, অথচ জ্বালানি বিক্রি করে আমরা যে কমিশন পেতাম, সেটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নাজমুল হক বলেন, ২০১৩ সালে বিক্রয়ের ওপর অকটেন ও পেট্রোলে ৪.৭৫ শতাংশ এবং ডিজেলে ৩.২২ শতাংশ কমিশন নির্ধারিত ছিল। সবকিছুর খরচ বাড়াতে ২০১৬ সালে আমরা এই কমিশন ৭ শতাংশ করার দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হই। এরপর বাধ্য হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়। তারা আমাদের এক মাসের মধ্যে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও দীর্ঘ ছয় বছরে তা কার্যকর হয়নি। গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের মূল্য হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর আমাদের কমিশন দিয়েছে কমিয়ে। অকটেন ও পেট্রোলে ৪.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩.৭৮ শতাংশ এবং ডিজেলে ৩.২২ শতাংশ থেকে ২.৫৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সভাপতি বলেন, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মাপে কারচুপি রোধে অভিযান চলছে, এই অভিযানকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি অভিযানে অবশ্যই বিপিসি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের রাখার দাবি জানাচ্ছি। ভোক্তা অধিকারের কাজ, ভোক্তাদের ঠিক মাপে এবং গুণগতমানে তেল দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটা দেখা। তা না করে তারা পাম্পের এটা-সেটা কাগজ দেখতে চান। তারপর জরিমানা করেন, মিডিয়ার সামনে প্রচার করেন। মামলায় তারা যে ধারা দেন, সেটা হচ্ছে ‘তেলের পরিমাণে কারচুপি’! সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে থাকলে ভোক্তা অধিকার এটা করতে পারবে না।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিপিসি ও অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তেলের মূল্যের ওপর পার্সেন্টেজ ভিত্তিতে করতে হবে।
২. জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের (৯ ফেব্রয়ারি ২০১১) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপিসি বা বিপণন কোম্পানির প্রতিনিধি ছাড়া কেবল ভোক্তা অধিকার বা বিএসটিআই কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না।
৩. জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিপিসি এবং বিপণন কোম্পানির প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কোনো দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান পাম্পের কাগজপত্র চেক করার নামে পাম্প মালিকদের হয়রানি করতে পারবে না।
৪. সওজ অধিদপ্তরের ইজারা মাশুল যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করতে হবে। পাম্পের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংক ক্যালিবারেশন সার্টিফিকেট নবায়ন প্রথা বাতিল করতে হবে।
৫. জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের (৯ ফেব্রয়ারি ২০১১) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাস্তায় ট্যাংক লরির কাগজ চেকিংয়ের নামে পুলিশ কর্তৃক চালককে হয়রানি করা যাবে না। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্যাংক লরির কাগজপত্র ডিপো গেটে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ হারুন অর রশীদ, যুগ্ম মহাসচিব মীর আহসান উদ্দিন পারভেজ, বরিশাল বিভাগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন সিকদার, চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি এহসানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট বিভাগের সভাপতি মো. মোস্তফা কামাল, রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ শেখ, চট্টগ্রাম বিভাগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জায়েদ আহমদ তপন, বরিশাল বিভাগের সহ-সভাপতি মীর জিয়াউদ্দিস মিজান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. ফজলুল হক, সভাপতি মেঘনা গোধনাইল মো. রুহুল আমিন ও চট্টগ্রাম বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক মো. নূরুল আলম।
সূত্র : রাইজিং বিডি
Discussion about this post