সাদা মেঘের ভেলা আর হাওয়ায় দোল খাওয়া কাশফুল মনে করিয়ে দেয় শরৎ এসে গেছে। আর শরৎ মানেই শারদীয় উৎসব। জগৎ জননী মহামায়া দেবী দুর্গা জানিয়ে দেয় আগমনী বার্তা। ঢাকের বাজনা হৃদয়ের মাঝে মৃদুস্বরে বেজে উঠছে অফুরন্ত আনন্দ। চারিদিকে সাজ সাজ রব, দুয়ারে কড়া নাড়ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। পুজোর আর মাত্র কয়েক দিন বাকী। শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পী ও পূজা উৎযাপন কমিটি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসবকে ঘিরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ। কে কত দর্শনীয়-কারুকার্যমন্ডিত প্রতিমা ও সজ্জা তৈরি করে ভক্তদের হৃদয় ছুঁতে পারেন, এরই প্রতিযোগিতা চলছে এখন মন্ডপে মন্ডপে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে সবমিলিয়ে এখন চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্ততি। ইতোমধ্যেই প্রতিটি পূজা মন্ডপে নিজ নিজ পূজা কমিটি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী স্থানীয় ও অন্যত্র থেকে স্বনামধন্য কারিগর এনে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন। এখন প্রত্যেকটি মন্দিরে চলছে প্রতিমায় রংয়ের কাজ। এছাড়াও প্রতিটি মন্ডপে চলছে প্যান্ডেল, গেট, তোরণ ও আলোকসজ্জা সহ বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার কাজ। একেক মন্ডপে একেক আঙ্গিকে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা।
আগামী পহেলা অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হবে এবং ৫ই অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে এ বছরের দূর্গাপুজা শেষ হবে। দেবী-দুর্গার প্রতিমা ছাড়াও গণেষ, কার্তিক, লক্ষি ও স্বরস্বতীসহ বিভিন্ন ছোটবড় প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন প্রতিমা শিল্পীরা। একেকটি প্রতিমা তৈরিতে ১০-১৫ দিন সময় লেগেছে। শেষ সময়ে এসব প্রতিমার সৌন্দর্য্য বর্ধণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা।
এদিকে শারদীয় এ দুর্গা উৎসবকে সামনে রেখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বইছে খুশির আমেজ। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে পূজার প্রস্তুতি। পরিবারের জন্যও করছেন পূজার নিত্য নতুন কেনা-কাটা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবছর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় মোট ১৮৩টি পূজা মন্ডপে চলছে দুর্গাপূজার আয়োজন।
এর মধ্যে কালিহাতী পৌরসভায় ৪৬টি, এলেঙ্গা পৌরসভায় ১৮টি, নাগবাড়ী ইউনিয়নে ১২টি, পারখী ইউনিয়নে ৯টি, বীরবাসিন্দা ইউনিয়নে ৪টি, কোকডহরা ইউনিয়নে ১০টি, বল্লা ইউনিয়নে ১৪টি, পাইকড়া ইউনিয়নে ৭টি, সহদেবপুর ইউনিয়নে ৭টি, বাংড়া ইউনিয়নে ১৩টি, নারান্দিয়া ইউনিয়নে ১১টি, দশকিয়া ইউনিয়নে ২১টি, সল্লা ইউনিয়নে ১০টি ও গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নে ১টি পূজা মন্ডপে চলছে দুর্গাপূজার আয়োজন।
জানাগেছে, পূজা শান্তিপূর্ণ করতে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করে চলছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অনুদান বরাদ্দের কাজ।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সেন বলেন, প্রশাসনসহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় বিগত বছরের ন্যায় এবারের পূজাও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা আজিজুর রহমান বলেন, নির্বিঘ্নে পূজা উৎযাপনে গত ২১ সেপ্টেম্বর উপজেলার প্রত্যেকটি পূজামন্ডপের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে থানা প্রশাসন।
বর্তমানে আমরা পুলিশের টহল অব্যাহত রেখেছি। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ মন্ডপে মন্ডপে গিয়ে দেখাশুনা করছে, পূজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার রাখা হবে।
কামরুল হাসান
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি