মোঃ রাকিব হোসেন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে তাঁত শিল্পকে আধুনিকরণের লক্ষ্যে প্রোসেসিং, প্রিন্টিং ও ডায়িংয়ের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। যন্ত্রপাতি গুলো ক্রয় এবং স্থাপনের কাজ করছেন খুলনা শিপইয়ার্ড। চুক্তি অনুযায়ী কাজের সময় শেষ হয়েছে গত জুনমাসে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। যন্ত্রপাতি স্থাপনের জায়গা না থাকায় অবশিষ্ট কাজ বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে যন্ত্রপাতি গুলো স্থাপন না হওয়ায় সংরক্ষণের অভাবে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন ও কাঠের বক্স দিয়ে রাখা হয়েছে। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ে দিনেদিনে যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট হচ্ছে। এতে প্রকল্পের প্রায় ২০ কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সকালে কুমারখালী তাঁতবোর্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশের নীচে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি গুলো পলিথিন ও কাঠ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। রোদ, ঝর, বৃষ্টি, ধূলাবালি সব যন্ত্রপাতির উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। যন্ত্রপাতির আশেপাশে আগাছা লতাপাতা জন্মেছে।
খুলনা শিপইয়ার্ড সুত্রে জানা গেছে, চুক্তি অনুয়ায়ী খুলনা শিপইয়ার্ড ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে চলতি বছরের জুনমাসে শেষ হওয়ার কথা। সেই লক্ষে খুলনা শিপইয়ার্ড প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ের ৪৬ টি যন্ত্রপাতি তাঁতবোর্ডের নিকট হস্তান্তর করেছেন এবং প্রায় ৩০ শতাংশ যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছেন। অবশিষ্ট যন্ত্রগুলো অবকাঠামোর সাথে সমন্বয় না হওয়া, উপযুক্ত অবকাঠামো না থাকা এবং পুরাতন যন্ত্রপাতি অপসারণ না হওয়ায় নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়নি। সেগুলো খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। জায়গা পেলেই স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
কুমারখালী তাঁতবোর্ড সুত্রে জানা গেছে, ভবনের মধ্যে পুরাতন যন্ত্রপাতি থাকায় নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়নি। পুরাতন যন্ত্রপাতি অপসারনের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার ও বিক্রির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অপসারনের জন্য এখনও কার্যাদেশপত্র তৈরি হয়নি। আগামী সপ্তাহে কার্যাদেশ হতে পারে এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।এবিষয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডের সিসিও সামির আহমেদ বলেন, ‘জুনে প্রকল্পের সময় শেষ হয়েছে। সময় শেষে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু জায়গা থাকায় প্রধান প্রধান যন্ত্রপাতি গুলো এখনো স্থাপন করা হয়নি। প্রায় ২০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি খোলা আকাশের নিচে পলিথিন ও কাঠ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ঝড় বৃষ্টি রোদ হচ্ছে। কিছুটা হলেও যন্ত্রপাতির ক্ষয়ক্ষতি হবে।
‘তিনি আরো বলেন, ‘ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। জায়গা খালি হওয়া মাত্রই কাজ শুরু করা হবে।’কুমারখালী তাঁতবোর্ডের সহাকরি মহাব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘ জায়গার অভাবে যন্ত্রপাতি গুলো বাহিরে রাখা রয়েছে। পুরাতন যন্ত্রাংশ অপসারনের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার ও বিক্রি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কার্যাদেশ প্রস্তুত করা হবে এবং দুই মাসের মধ্যেই নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শুরু হবে।’আজ বৃহস্পতিবার সকালে কুমারখালী তাঁতবোর্ড চত্ত্বরে ৪৯ জন তাঁতিদের মাঝে ২৯ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার ঋণের চেক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাঁতবোর্ড। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া -০৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ জায়গা নেই, ম্যান নেই, এসব প্রকল্পের দরকার কি। বিসিকের লোকজন পার্সেন্টেজ পকেটে ভরার জন্য এসময় অব্যবস্থাপনা প্রকল্প তৈরি করেছেন। যেকোনো প্রকল্প তৈরিতে কর্তাদের সচেতন হওয়ার নির্দেন দেন তিনি।
Discussion about this post