চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আমেনা বেগম বলেছেন, চট্টগ্রামে গরু, ছাগলের জন্য, বরযাত্রীদের চিংড়ি মাছের জন্য মানসিক নির্যাতন করা হয়।
আমেনা বেগম সমবেত নারীদের উদ্দেশে বলেন, আমি অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা।মায়েরা এবং বোনেরা, আমার বাবাকে অনেক লোক অনেক কথা বলেছিলেন। এ মেয়েকে পড়িয়ে কী করবেন? বিয়ে দিচ্ছেন না কেন? আমার বাবা চুপচাপ থেকে মাথা নিচু করে আমাকে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতেন ঢাকায়।আজ আমি পুলিশ কর্মকর্তা। আমার মা প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হননি, তার একটি স্বপ্ন ছিলো মেয়ে এমএ পাস করবে।আপনাদেরও একই স্বপ্ন। আপনার মেয়েকে শিক্ষিত করে তুলবেন, স্বাবলম্বী করবেন। মেয়ে হয়েছে মন খারাপ করবেন না। তারা মাকে দেখে। আমার মা আমার বাসায় থেকে মারা গেছে। মেয়েকে পড়াশোনা করান, তাকে স্বাবলম্বী, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখান। সে নার্স হোক, স্কুলশিক্ষক হোক, যেকোনো চাকরি করে হোক, সে স্বাবলম্বী হবে, কারও ওপর নির্ভর করবে না। তাহলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ হবে।
আপনারা যদি কোনো জায়গায়, আপনার পাড়ায়, আশপাশে খবর পান একটি মেয়েকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন, স্বামী নির্যাতন করে তবে ৯৯৯ এ খবর দেন। পুলিশকে জানান। মেয়র ও কাউন্সিলদের জানান এ মেয়েটিকে নির্যাতন করেছে। উনারা আমাদের জানাবেন, থানাকে জানাবেন। চট্টগ্রামে নির্যাতন আরও চমৎকার। কী রকম-
‘তোয়ার বাপ গরু ন দে। ঈদুত গরু ন দে। ফার্নিচার ন দে। পিডা ন দে। আঁর মান সম্মান নাই। মানুষের কাছে আঁই ইজ্জত রাখিত ন পারির।’ এটা মানসিক নির্যাতন। এটার কোনো প্রমাণ নেই। আমার কাছে অনেকে আসেন।
‘গরু ন দে, ছ’ল ন দে, ন হাবাই, বইরাত ২ হাজার হাবান পরিবু।’ দয়া করে এ নির্যাতন বন্ধ করুন। এটা যৌতুক। ইসলাম ধর্মে কোথাও লেখা নেই।
ধনাঢ্য ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা গরিব মানুষ খাওয়াই দিয়েন। কারও বাড়ি করে দেন। এত খরচ করে বিয়ের অনুষ্ঠান কইরেন না। এত খরচ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের অনেক সময় সমস্যায় ফেলেন। আমার কাছে এ পর্যন্ত কয়েকশ মামলা এসেছে শুধু বিয়ের খাওয়া নিয়ে। এটাকে যৌতুক বলে। আপনার মেয়েকে স্বাবলম্বী করেন, যৌতুক লাগবে না। বাল্য বিয়ে হবে না, যদি আপনার মেয়েকে বিয়ে না দেন।
আমেনা বেগম বলেন, আপনি মা। আপনি জানেন সন্তান কী করছে। সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে। সে খারাপ লোকের পাল্লায় পড়লো কিনা। আপনি মা, দায়িত্ব আপনার।
ভাই-বাবাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্তানের, ভাইয়ের খেয়াল রাখেন। কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে। সবাই যদি সচেতন হোন-মাদক চট্টগ্রাম শহরে থাকবে না। যদি মাদক বিক্রি করার স্থানের কথা জানেন, মাদক বিক্রেতার খবর জানেন তবে ৯৯৯-এ খবর দেবেন। এ শহরের পাশ দিয়ে কক্সবাজার থেকে মাদক ঢাকায় যাবে। আমরা লক্ষ লক্ষ মাদক আটক করি। বাংলাদেশে ৭০ লাখের বেশি মাদকসেবী আছে। এসব মাদক আসছে প্রতিবেশী দেশ থেকে। আমরা কেনো মাদকের ছোবলে পা দেবো? আপনার আমাদের দূত, আমাদের সোর্স। আমাদের সংবাদ জানান। মাদক এ চট্টগ্রামে থাকবে না।
এমন অনেক পরিবার আছে মাদকের জন্য সন্তান বাসার সিলিং ফ্যান খুলে বিক্রি করে দেয়। মায়ের গয়না বিক্রি করে দেয়। কারণ তাকে মাদক কিনতে হবে। তারপর সে ছিনতাই করে। আপনি চান আপনার সন্তান ছিনতাইকারী হোক? অবশ্যই না। সুতরাং আপনাকে এটা প্রতিরোধ করতেই হবে।
জঙ্গিবাদবিরোধী ভাড়াটিয়া সচেতনতা পোস্টার তৈরির জন্য মেয়র ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন উল্লেখ করে আমেনা বেগম বলেন, আপনার পাশের ভাড়াটিয়া যদি এমন হয় কারও সঙ্গে মেশে না। তার বাসায় অনেক সার্কিট জমা, জেল জমা। উনি এগুলো দিয়ে বোমা বানাবে। হঠাৎ একদিন সকালে দেখলেন, আপনার ভবন চারপাশ থেকে বোম্ব ডিসপোজাল টিম ঘেরাও করে রেখেছে। ঢাকা থেকে সোয়াত আসছে। আপনিও সন্তানকে নিয়ে আটকা পড়েছেন। জঙ্গিরা মাইকে বলছে-বিল্ডিংসহ উড়িয়ে দেবো। আপনার কেমন লাগবে।
এ ধরনের পরিস্থিতি সিলেটের আতিয়া মহলে হয়েছিলো। জঙ্গিরা বলেছিলো, ঢাকা থেকে টিম আসলে সারেন্ডার করবে। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিলো, ঢাকার টিমসহ ভবনটি উড়িয়ে দেওয়া। জঙ্গিবাদ ইসলামের অপব্যাখ্যা।
তিনি শোলাকিয়া, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা, জামায়াত-শিবিরের আগুন সন্ত্রাস, সীতাকুণ্ডে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধের কথা তুলে ধরেন।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচএম সোহেলের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন চসিকের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী।
প্যানেল মেয়র নিছারউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, মেয়র নাছিরের মধ্যে চট্টগ্রামের প্রতি ভালোবাসা ও অন্যায়ের প্রতিবাদের সাহস দেখেছি। তিনি মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যৌতুক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন।
প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। চট্টগ্রামকে মাদকমুক্ত করতে আজ আমাদের শপথ নিতে হবে।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা বলেন, মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অলিখিত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ওয়ার্ডগুলোতে সমাবেশ করেছেন, জনমত গড়ে তুলেছেন। আজ মহাসমাবেশে চট্টগ্রামের মানুষ মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যৌতুক ও দুর্নীতিবিরোধী শপথ নিতে এসেছেন।
Discussion about this post