মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিলো তারা দেশের জন্য কি করেছে এবং কতটুকু উন্নয়ন করেছে-এই পার্থক্য মানুষ বিবেচনা করে দেখবেন।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৫০ জেলায় ১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন করতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৫০ জেলায় ১০০ মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৮২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যার বেশিরভাগ অর্থের জোগান দিয়েছে সরকার। দুই হাজার কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সবচেয়ে বড় সড়ক সাউথ এশিয়ান সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) কর্মসূচির আওতায় তৈরি হয়েছে। সেটি হলো জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
সবচেয়ে ছোট ইজতেমা সড়কের দৈর্ঘ্য ১.৩ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ সংখ্যক সড়ক উদ্বোধন হয়েছে ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে।
১০০ সড়কের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩২, ময়মনসিংহে ৬, চট্টগ্রামে ১৫, সিলেটে ৪, খুলনায় ১৬, রাজশাহীতে ৮, রংপুরে ১৫ ও বরিশালে চারটি সড়ক রয়েছে। জাতীয় সড়কে যুক্ত হচ্ছে ২০৬.৫৪ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিকে ৬২১.৬৮ কিলোমিটার। আর জেলায় এক হাজার ১৯৩.৩৪ কিলোমিটার সড়ক যুক্ত হচ্ছে।
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনে গ্রাম পর্যায় পর্যান্ত শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ড করে তোলার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ’৯৬-তে ক্ষমতায় এসেও আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করেছিলাম। সারা দেশ থেকে এখন রাজধানীতে আসতে গেলে কম সময়ে মধ্যে আসতে পারে। এরপরও বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করবে কি না-এটাই আমার প্রশ্ন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে।এর বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিলো এরা দেশের জন্য কি করেছে এবং কতটুকু উন্নয়ন করেছে, এই পার্থক্য মানুষ বিবেচনা করে দেখবেন।
আওয়ামী লীগ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশ্বাস করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, আমরা প্রাইভেট টেলিভিশন দিয়েছি, রেডিও, অনলাইন সব ডিজিটাল পদ্ধাতিতে যোগাযোগ …কাজেই সত্য মিথ্যা অনেক কিছু বলা যেতে পারে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, সাধারণ মানুষের উন্নয়ন নিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, মানুষ যেন ভালো জীবনযাপন করতে পারে।’
‘কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার প্রসার ঘটানো, উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা, ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি সম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্ঞানে এবং দক্ষতায় প্রতিটি বাঙালি যেনো সেভাবে তৈরি হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এদেশের মানুষকে শান্তি, নিরাপত্তা উন্নয়ন, নিশ্চিত করতে চাই। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বারবার ঝড়-আপ্টা এসেছে, আমরা তা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”
বাংলাদেশকে স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়ো তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য ’৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা, যেখানে জনগণ হবে স্মার্ট।’
‘অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। যেখানে সবাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। ডেল্টা প্ল্যান করে সেটা বাস্তবায়নের কাজও আমরা শুরু করে দিয়েছি।”
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই দল ক্ষতায় আসলে মানুষের কল্যাণে কাজ করে। একশ মহাসড়ক একই দিনে উদ্বোধন এটা অতীতে কেউ পেরেছে? পারেনি। এটা আওয়ামী লীগই করেছে।
সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চালকদের ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সাথে সাথে সড়ক পথে চলতে গেলে যে নিয়মকানুন আছে সেগুলো স্কুল জীবন থেকে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে এটা ব্যাপক প্রচারের কথাও বলেন তিনি।
রাস্তায় চলার সময়ে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।
দুর্ঘটনা হলে প্রতিহিংসা পরায়ণ হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে নিন। কারণ দুর্ঘটনা চালকের কারণেও হতে পারে পথচারীর ভুলের কারণেও হতে পারে। বরং দুর্ঘটনার কারণে সম্ভাব্য গণপিটুনির ভয়ে চালক গাড়ি চালিয়ে চলে যান। এতে দুর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তির বাঁচার সম্ভাবনা কমে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই দেশ উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতো। ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশ যেখানে কিছু নেই, সেখান থেকে একটি দেশকে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছেন তখন ১৫ আগস্টের ধাক্কা আসে। সিঙ্গাপুর মালেয়শিয়াকেসহ অনেক দেশকে আমরা দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখি। জাতির পিতা বেচে থাকলে ১০ বছরের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হতো দৃষ্টান্ত।
সূত্র : রাইজিং বিডি
Discussion about this post