কামরুল হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলায় যমুনার চরাঞ্চলে জেগে উঠেছে বালুময় ফসলি জমি।কৃষক সেই জেগে ওঠা চরে মনআনন্দে আবাদ করছে নানান ফসল। আর এসব ফসলি জমির মালিকদের জিম্মি করে জেগে ওঠা জমিতে ভেকু বসিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অবাধে অবৈধভাবে বালু কেটে বিক্রি করছে ভুঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম খোকা ওরফে কালা খোকা।
স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন বালু কাটা বন্ধে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও পরক্ষনেই শুরু হয় এ বালু কাটার মহাযজ্ঞ। অবৈধভাবে বালু কাটার ফলে বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রতি বছর বিলীন হয় ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির, সড়ক, স্কুলসহ নানা স্থাপনা। সেই সময় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্র্ড জিওব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে বালু কেটে বিক্রির কারণে হুমকির রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভূঞাপুর সড়কের গোবিন্দাসী কাকুদাইর পর্যন্ত সেতু রক্ষা বাঁধ, বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস গাইড বাঁধ ও ভূঞাপুর-তারাকান্দি মহাসড়ক। স্থানীয়রা আরো জানান,এছাড়া বালু কাটার ফলে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে গভীরতা।
সরেজমিনে জানা যায়, ভুঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের জিগাতলা এলাকায় যমুনায় কয়েক একর চর জেগে ওঠেছে। কৃষক সেই জেগে ওঠা চরে বাদাম, তিলসহ নানা ফসল রোপন করছে। সেই ফসলী জমিতে জোরপুর্বক ৩ টি ভেকুু বসিয়ে দেদারছে মাটি কাটছে বিএনপি নেতা কালা খোকা। খোকা বিএনপি সমর্থন করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে আতাত করে এ বালু ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। খোকা শুধু মাটির ব্যবসায়ী নয়, তিনি এ এলাকায় মাদক ও জুয়াড় ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এলাকায় তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।
জিগাতলা এলাকার ভুক্তভোগী আকবর মিয়া, নুরে আলমসহ অনেকেই জানান, যমুনা চর জেগে ওঠারপর আমরা সেই চরে নানান ফসল আবাদ করে নিজেদের চাহিদা মিটাচ্ছি। সেই ফসলী জমির মধ্যে ভেকু বসিয়ে জোরপুর্বকভাবে মাটি কাটছে ওই কালা খোকা। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে মারপিটসহ মিথ্যা মালার ভয় দেখায়। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেনা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জমির মালিক জানান, কালা খোকা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে এ মাটি কাটছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালায়। তারা চলে যাওয়ার পরই ফের মাটি কাটার উৎসব শুরু হয়। এভাবে বালু মাটি কেটে ফেলা হলে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বালু ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম খোকার নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের জমি থেকেই আমি মাটি কাটছি। তাছাড়াও আমি সব জায়গায় ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি।
এ প্রসঙ্গে, ভুঞাপুর সহকারি কমিশনার (ভুমি) তামান্না রহমান জ্যোতি জানান বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনি ইউএনও মহাদয়কে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়ে স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভূঞাপুর উপজেলার জিগাতলা এলাকায় গাইড বাঁধসংলগ্ন থেকে অবৈধভাবে বালু কাটা হচ্ছে শুনেছি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Discussion about this post