প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি সর্বদা রক্ষা করে।
তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আওয়ামী লীগ যা বলে, আওয়ামী লীগ তার কথা রাখে।’
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত প্রস্তাব (সাধারণ) এর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান (দিনাজপুর-৫) কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটির ওপর আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়।
বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২৬ সালের মধ্যে স্নাতক হওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করবো।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের ঋণ শোধ করার লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় পূনর্ব্যক্ত করেন।
সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপরে তুলেছিলেন। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে এই দেশের মানুষের কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক সাশ্রয় এসেছে। মানুষ অন্তত দুইবেলা পেট ভরে খেতে পারছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত বলে মনে করেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ ও কারোনাভাইরাসের কারণে আমাদের খুব কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। যেখানে উন্নত দেশ নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আমরা সেখানে অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সক্ষম হচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা রক্ত দিয়ে তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছেন। এবার তার রক্তের ঋণ শোধ করার পালা এবং আমরা রক্তের ঋণ শোধ করতে সক্ষম হব যখন প্রতিটি গৃহহীন মানুষ ঘর পাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাড়ি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী করতে পারব।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে হাতে অস্ত্র নিয়ে রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে।
জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রতি এই বাঙালি জাতির ভালোবাসার ঋণ যেভাবেই হোক রক্ত দিয়ে শোধ করবেন।
‘জাতির পিতা বলেছিলেন- রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করবো,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবা দেশে ফিরে এসে কিন্তু আমাদের কথা ভাবেননি, ভেবেছেন তার জনতার কথা। তিনি ছুটে গিয়েছিলেন তার জনতার কাছে, রেসকোর্স ময়দানে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রূপকল্প-২০২১ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে এবং ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে।
তাঁর সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, যা হবে আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানসহ জনসংখ্যায় সজ্জিত স্মার্ট বাংলাদেশ। তাহলে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ হবে।’
শেখ হাসিনা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতার আজীবন সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ যেখানে জয় বাংলা শ্লোগান যেটি একসময় হারিয়ে গিয়েছিল তা আবার ফিরে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এই অগ্রগতি কেউ ঠেকাতে পারবে না। জয় বাংলা উচ্চারণ করেই আমরা এগিয়ে যাব। ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি এই আমাদের প্রতিশ্রুতি।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা ও রওশন আরা মান্নান, জাসদের হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন আলোচনায় অংশ নেন।
সূত্র – একুশে টিভি