কামরুল হাসান, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বৃদ্ধ চাচা-চাচিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ ওঠেছে ভাতিজা শাজাহানের বিরুদ্ধে। এছাড়াও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে নির্যাতিতদের জমির রোপনকৃত মাস কলাই কেটে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সদর উপজেলার হুগরা ইউনিয়নের মালতিপাড়া গ্রামে বর্বরাচিত ঘটনাটি ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে রাতে জড়িত নাইম, শাহজাহান ও নাজমা বেগমের নাম উল্লেখ করে টাঙ্গাইল সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতিত অসহায় বৃদ্ধ স্বামী স্ত্রী।
অভিযোগে জানা যায়, নির্যাতিত দুলাল মিয়া (৬০) এর পৈত্রিক সম্পতি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছে ভাতিজা শাহজাহান মিয়া (৬৫) তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৫২) ও ছেলে নাইম মিয়া (৩০) গংদের সাথে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এর জের ধরেই বৃদ্ধ দুলাল মিয়ার উপর হামলা চালায় তারা। হামলার শুরুতে নাইম মিয়া দুলাল মিয়ার মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। এছাড়াও শাহজাহান ও নাজমা বেগম হাতুরী ও লাঠি দিয়ে মারপিট করতে থাকেন। এ সময় দুলাল মিয়াকে বাঁচাতে যাওয়ায় শাহজাহান মিয়াসহ হামলাকারীরা বৃদ্ধের স্ত্রী পারভীনকে বিবস্ত্র করে মারপিট করেন। হামলাকালে মদদদাতা কয়েকজন পাহাড়া দিয়ে হামলায় সহযোগিতা করেন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাঠায়। হামলায় বৃদ্ধের মাথা ফাঁটাসহ স্বামী স্ত্রীর শরীরের নানা স্থানে আঘাত পান। শেষে হামলাকারীরা বৃদ্ধের জমির রোপনকৃত মাস কলাই কেটে নেন। এর আগেও তারা কয়েক দফায় হামলা চালানোসহ বিষ দিয়ে পুকুরে চাষকৃত মাছ মারার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
নির্যাতিত বৃদ্ধ দুলাল মিয়া জানান, আমি প্রায় ১৭ বিঘা জমির মালিক। এর মধ্য থেকে সাড়ে ২৭ শতাংশ জমি রছো নামের স্থানীয় এক কৃষককে বর্গ দিই আমি। বর্গ নেয়া ওই জমিতে কৃষক রছো মাস কলাই আবাদ করেন। গতকাল শুক্রবার রোপনকৃত ওই মাস কলাই কাটতে যান কৃষক রছো। এ সময় প্রতিবেশী শাহজাহান, নাজমা বেগম ও নাইম ফসল কাটতে বাধা দেয়। সন্ধ্যার সময় ওই সংবাদ পেয়ে আমি জমিতে গেলে শাহজাহান, নাজমা বেগম ও নাইম আমাকে মারধর করতে শুরু করে। এ সময় আমাকে স্ত্রী বাঁচাতে গেলে তারা আমার স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালায়। এর আগেও তারা আমাকে কয়েক দফায় মারধর করাসহ পুকুরে ছাড়া মাছ বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। জমি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার কয়েক দফায় শালিস করেও কোন সুরাহা দিতে পারেননি। জমির কোন কাগজপত্র না থাকা সত্তে¡ও তারা মালিক দাবি করে আমার উপর এইভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন।
নির্যাতিত বৃদ্ধা পারভীন জানান, আমার প্রতিবন্ধী একটি ছেলে সন্তান আছে। আমার স্বামীর অনেক সম্পতি থাকায় প্রতিবেশী কয়েকজন সেগুলো ভোগ দখলের চেষ্টায় দফায় দফায় নির্যাতন করছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই প্রতিবেশীরা আমাকে বিবস্ত্র করাসহ আমাকে ও স্বামীকে লোহার রড, হাতুরী ও লাঠি দিয়ে মারধর করেছেন। আমি দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
অভিযুক্ত নাইম জানান, আমাদের জমির মাস কলাই কাটতে যাওয়ায় আমার চাচাত ভাই দুলাল লাঠি নিয়ে আমার বাবা শাহাজাহান মিয়াকে মারতে যান। এ সময় ওই লাঠির আঘাত দুলাল মিয়া মাথায় লাগে। এতে তার মাথা ফেটেছে। তারা কাউকে মারধর করেননি।
হুগড়া ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ জানান, গতকাল রাতে দুলাল মিয়াকে মারধরে বিষয়টি আমি শুনেছি। হামলার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কেননা শাহজাহান মিয়া দুলাল মিয়ার চাচা। এছাড়াও কাগজপত্রে আমরা দেখতে পেরেছি জমিটির প্রকৃত মালিক দুলাল মিয়া। শাহজাহান মিয়া জোরপূর্বক জমির মালিকানা দাবি করছেন। এ নিয়ে কয়েক দফায় স্থানীয় ভাবে শালিস হয়েছে তবে শালিসের রায় মানেননি শাহজাহান মিয়া। পরে বাধ্য হয়ে দুলাল মিয়া আদালতে মামলা করেছেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান জানান, হুগড়া ইউনিয়নের মালতিপাড়ার জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীর উপর হামলা ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) মুরাদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
Discussion about this post