দেশে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত চার লেনের জয়দেবপুর-ময়মনসিংহের ৮৭.১৮ কিলোমিটার সড়কটি ১০ লেনবিশিষ্ট সর্বাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও ময়মনসিংহ সফর করে গেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সমীক্ষা, পরিকল্পনা, ডিজাইন গ্রহণের মাধ্যমে একনেকে পাসের পর মূল কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের মধ্যে জিটুজির ভিত্তিতে পিপিপির মাধ্যমে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে। খুব শিগগির কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিন ময়মনসিংহ সফর করার কথা রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কও এক্সপ্রেসওয়ে ১০ লেনে উন্নীত করে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের।
টেকসই মহাসড়ক ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে বিশেষজ্ঞ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পিপিপি সেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিশির কুমার রাউত জানান, বর্তমানে বিদ্যমান চার লেনবিশিষ্ট জয়দেবপুর-ময়মনসিংহের ৮৭.১৮ কিলোমিটার সড়কটি এখন এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে ১০ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিদ্যমান চার লেনের পাশাপাশি ১০ ফুট প্রশস্ত দুপাশে ব্যারিয়ার দিয়ে ইমারজেন্সি লেন, যা দিয়ে শুধু অ্যাম্বুলেন্স, নিরাপত্তা গাড়ি, ভিআইপিসহ যে কোনো জরুরি প্রয়োজনীয় গাড়ি চলাচল করবে। এর পর আরও ১৮ থেকে ২৪ ফুট করে স্বল্পগতির যান চলাচলের জন্য আলাদা দুটি লেন করা হবে।
একপাশে ৫টি সড়ক লেনসহ দুপাশে দশ লেনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রতি ২-৩ কিলোমিটার পর আন্ডারপাস ইউটার্ন নির্মিত হবে। দুপাশের অন্য সড়ক থেকে এক্সপ্রেসওয়ে সড়কে উঠতে ও বের হতে ইন্টারচেঞ্জ (যা আন্ডারপাস ও ওভারপাস সিস্টেমে কোনো গাড়ি মুখোমুখি হবে না) থাকবে।
শিশির কুমার রাউত আরও জানান, সড়কে অত্যাধুনিক ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। সড়কের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সার্বক্ষণিক মনিটরিং সিস্টেমে আসবে। কোনো দুর্ঘটনা, মাত্রাতিরিক্ত গতি বা কোনো ট্রাফিক লঙ্ঘন করলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা। রাস্তায় কোনো সমস্যা হলে দূর থেকেই সংকেত দেবে। দুপাশে সর্বাধুনিক দুটি রেস্টহাউস, শপিং, রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান, গাড়ির তেল ভর্তিসহ নানা সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে।
বিদ্যমান মহাসড়কের উভয় পাশে সওজর পর্যাপ্ত ভূমি থাকায় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ খুবই কম হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০১৭ সালে জিটুজি পিপিপি নীতিমালার আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে পিপিপি ভিত্তিতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিগগিরই একটি প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। নীতিগত অনুমোদন পাওয়া গেলে বিস্তারিত সমীক্ষার আলোকে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক (এন-৩) দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক করিডর। ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার সঙ্গে সংযোগ প্রদানকারী এই মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এই সড়ক করিডর সংলগ্ন এলাকাগুলোয় ব্যাপক শিল্প স্থাপনা গড়ে ওঠায় ভারী যানবাহনের চলাচলও সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এ ছাড়া সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা অনুসারে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও জামালপুর জেলায় মোট ১০টি অর্থনৈতিক জোন হবে।
এসব অর্থনৈতিক জোনের কারণেও এ সড়কে যানবাহন চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে। শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত মোট চারটি স্থলবন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলপথে বাণিজ্যের কারণেও এই সড়ক করিডরে যানবাহনের চাপ ইতোমধ্যে বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান যানবাহন নিরাপদ ও দ্রুত চলাচল নিশ্চিত করতে সরকার গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়ক সম্পূর্ণ প্রবেশ-নিয়ন্ত্রিত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ময়মনসিংহ সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান বলেন, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়কটিতে এখন এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কথা ভাবছে সরকার। এটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে গত সোমবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিশির কুমার রাউত ও সড়ক ট্রেনিং সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ্র দাস সরজমিন ময়মনসিংহ সফর করে গেছেন। শিগগির কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সফর করবেন। তারা সম্মত হলে বাকি প্রক্রিয়া এগোবে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
Discussion about this post