ভিন্নরূপে অগ্নি সন্ত্রাস? সন্দেহ প্রধানমন্ত্রীর

রাজধানীতে একের পর এক আগুন কোনো দুর্ঘটনা নাকি অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা, এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি তদন্ত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ঈদের আগে ঢাকার বঙ্গবাজার আগুনে ভস্মীভূত হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতে নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর গতকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।

শেখ হাসিনা বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটা মার্কেটকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে…তাদের মার্কেটের যে অবস্থা সেখানে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা হতে পারে। কিন্তু এরপর পরপর চারটা ঘটনাকে যদি আমরা দেখি, তাহলে এটা কি আদতেই আসলেই কোনো দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে কোনো কারসাজি আছে।

গত ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১১ এপ্রিল চকবাজারের সিরামিক গুদামে আগুন লাগেল। গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে আগুন লেগে পুড়ে যায় ২০টির মতো গুদাম। এরপর নিউ মার্কেটের এই ঘটনা। বঙ্গবাজারের পর নিউ মার্কেটের আগুনটিও লেগেছে ভোরে। এটি নিয়েও সন্দেহ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ঠিক ছয়টার পর আগুনটা লাগছে। এটার উপর নজরদারিটা বাড়াতে হবে, অন্যান্য মার্কেটগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। আগামীতে কেউ যাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে, আমি শুধু ঢাকা শহরে না সারা দেশের সকলকে সতর্ক করছি, সবাই যেন একটু সতর্ক থাকেন।

নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিনও নাশকতার সন্দেহ প্রকাশ করে তা তদন্ত করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান রেখেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সন্দেহ প্রকাশের পাশাপাশি বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে এই অগ্নিকাণ্ডের যোগসূত্রের ইঙ্গিতও দেন। তিনি বলেন, আমরা তো জানি, আমাদের সেই কিছু রাজনৈতিক দল ঈদের পর আন্দোলন করবে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে সরকারকে উৎখাত করবে। কিন্তু এ সাধারণ মানুষগুলো কী অপরাধ করল? সাধারণ ব্যবসায়ীরা কী অপরাধ করল? সাধারণ ক্রেতারা কী অপরাধ করল? সাধারণ মানুষ যেখানে ক্রয়–বিক্রয় করে সেই জায়গাগুলো পোড়ায়ে দেওয়া, সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা; সাধারণ ব্যবসায়ীরা সারা বছর আকাঙ্ক্ষা করে বসে থাকে এই সময় একটা ব্যবসা করবে; এগুলো আমার মনে হয় সহজে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

ভিন্নরূপে অগ্নি সন্ত্রাস নয়ত? : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের সন্দেহ প্রকাশের পক্ষে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সহিংস আন্দোলনের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপির সেই একটানা অগ্নিসন্ত্রাস… প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি, ২৯টা ট্রেন, প্রায় আট–নয়টা লঞ্চ, ৫০০ স্কুল, ৭০টা সরকারি অফিস, ছয়টা ভূমি অফিস তো তারা পুড়িয়ে দিয়েছিল। ৩ হাজার ২০০ মানুষকে তারা পুড়িয়েছে, ৫০০–এর উপরে মৃত্যুবরণ করেছে। এখনও সেই পোড়া অবস্থায় মানুষগুলো কী রকম মানবতার জীবনযাপন করছে!

শেখ হাসিনা বলেন, এটা ভুলে যাইয়েন না বিএনপি–জামাতের অগ্নি সন্ত্রাসের কথা কেউ যেন ভুলে না যায়। তাদের অগ্নি সন্ত্রাস ভিন্নরূপে বিরাজমান কিনা, ভিন্নরূপে তারা এ ধরনের কিছু করছে কিনা, এটা সবাইকে একটু নজরদারিতে রাখতে হবে।

পাহারা ও আগুন নেভাতে নিজস্ব ব্যবস্থার তাগিদ : অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঠেকাতে পাহারা বসাতে বিভিন্ন বিপণি বিতানের ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপণ সামগ্রীর বন্দোবস্তও করতে বলেন।

ভিড় না করার অনুরোধ, বাধা দিলে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি : কোথাও আগুন লাগলে সেখানে ভিড় না করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণের যে প্রবণতা, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। ‘অহেতুক ভিড় করে’ কাজে বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগুন লাগলে দেখার জন্য মানুষের ভিড়, এটা কমাতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের কাজে বাধা দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজে যেন কেউ বাধা দিতে না পারে। আর যারা বাধা দিবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সূত্র : আজাদী