গরম ও লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ

তীব্র তাপদাহে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। তাপদাহের কথা মাথায় রেখে তিন মাস (এপ্রিল থেকে জুন) গড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১৫ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করেও চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। ওইদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট। উৎপাদন ঘাটতির কারণে প্রচণ্ড গরমে ভুগছে এবং বোরো ধানের খেতে পানি দিতে পারছে না।

জানা গেছে, গত কয়েকদিন ফেনী ও ময়মনসিংহ, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। এ কারণে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র বা স্থাপনাসমূহ ও তার সহকর্মীদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।

চিঠিতে বলা হয়, লোডশেডিংয়ের কারণে সম্মানিত গ্রাহকগণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এবং সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। দিনে ১০ থেকে ১৯ বার পর্যন্ত বিদ্যুৎ চলে যায়। দিনে মোট ৩ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর বিতরণ কোম্পানিগুলো আগে থেকেই লোডশেডিংয়ের সময় সূচি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু এবার কখন কোথায় বিদ্যুৎ যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কম।

রমজানের প্রথম ৩ সপ্তাহ ঢাকা মহানগরীসহ অন্যান্য শহরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।  কিন্তু দিনে দিনে গরমের তীব্রতা  বাড়ায়, অন্য শহরগুলোতে ভোগান্তি বাড়ছে।

পিডিবির মুখপাত্র শামীম হাসান বলেন, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। কিন্তু কিছু কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ বা জ্বালানি সংকটের কারণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমাদের পরিকল্পনা মতোই বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। প্রতিনিয়ত রেকর্ড উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এখন মূল সমস্যা অতিরিক্ত গরম। এই সময় এত গরম পড়বে, সেটা ধারণারও বাইরে ছিল।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ জানান, দিনের বেলা বাড়ি থেকে বের হলে আগুনে পুড়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়। আর বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে রাতে বাড়িতে থাকাও সমান কষ্টকর।

রংপুর জোন-৩ এর নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুল হক বলেন, জোনের অধীনে দৈনিক চাহিদা প্রায় ১৪ মেগাওয়াট কিন্তু গত ৩ দিন ধরে দৈনিক মাত্র ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, গত ৬ এপ্রিল থেকে দিনে ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারতের আদানি গ্রুপ। দেশের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি।  কয়লা চালিত বড়পুকুরিয়ায় একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তিন দিন আগে বন্ধ হয়েছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরুর পর ইতিমধ্যে কেন্দ্রটি কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। কারিগরি কারণে আশুগঞ্জ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট বন্ধ আছে।

জ্বালানির (গ্যাস, তেল, কয়লা, পানি) অভাবে উৎপাদন করা যাচ্ছে না দুই হাজার মেগাওয়াট। আর যান্ত্রিক ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণে থাকার কারণে উৎপাদন করা যাচ্ছে না ৩ হাজার ২৪১ মেগাওয়াট। চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে ঢাকার বাইরে।

আর সমাজের সুবিধাভোগীরা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়লে এ খাতের সমস্যারও সমাধান হবে। এখন গরম থেকে স্বস্তি পেতে বিদ্যুৎ নয়, বৃষ্টির ভরসায় থাকতে হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বলেন, এবার তাপপ্রবাহ ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এ কারণে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও দেশে লোডশেডিং হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এ বছর গ্রীষ্ম সেচ মৌসুম এবং রোজা একসাথে হওয়াতে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে সেটা আমরা ধারণা করেছিলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা পূর্ব প্রস্তুতির স্বাক্ষরও রেখেছি। কিন্তু গত ৫০ বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে বর্তমানে নজিরবিহীন দাবদাহ চলছে। এর ফলে ধারণার চেয়েও বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। দেশের অনেক জায়গায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ভোগের জন্য আমরা আন্তরিক সহমর্মিতা ও দুঃখ প্রকাশ করছি।

সূত্র : রাইজিং বিডি