থাকবেন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি।। সারা বছর মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনাসহ তিন বিষয়ে জোর
সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে নগরে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে। গতকাল আন্দরকিল্লা নগর ভবনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থাপনার নিশ্চিতকরণ ও ডেঙ্গু চিকিৎসা সুবিধা সহজ করা এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আয়েজিত তিনটি বিষয়ে জোর দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে মশার লার্ভা পেলে ভবন মালিককে বড় অংকের জরিমানা করা, সারা বছরই মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কীটতত্ত্ববিদ মো. মফিজল হক শাহ্, সিএমপির অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার কীর্তিমান চাকমা ও চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। সবগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি তাদের কার্যালয়ের আঙিনা ও আশপাশ পরিষ্কার রাখেন তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম পরিষ্কার শহরে পরিণত হবে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে সিডিএর তদারকি বাড়াতে হবে, যাতে পানি জমে না থাকে। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে মেয়র বলেন, পর্যাপ্ত মশার ওষুধ কিনে রেখেছি। জনসচেতনতা তৈরিতে লিফলেট–মাইকিং করা হচ্ছে। মশক নিধন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছি। খণ্ডকালীন হলেও কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সিটি কর্পোরেশনের স্কুল–কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনসচেতনতা কার্যক্রম চালানো হবে।
তিনি বলেন, জরিমানার মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপের চেয়ে জনসচেতনতায় জোরারোপ করছি আমি। ড্রোন দিয়ে ছাদে পানি দেখলে বাড়ির মালিকদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে। তবে, যাদের ছাদে খুব বেশিদিন পানি জমে আছে কেবল তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান আছে। করোনা যেভাবে মোকাবিলা করেছি, সন্ধ্যার মধ্যে যেভাবে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করেছি সেভাবে সবাইকে নিয়ে ডেঙ্গুও প্রতিরোধ করব।
ড্রোন দিয়ে মশা খোঁজা নিয়ে সমালোচনারও জবাব দেন মেয়র। বলেন, আমাদের দেশে যে কোনো কাজ করতে গেলে সমালোচনা হবে, বাধা আসবে। ড্রোন উড়িয়েছি ব্যক্তি স্বার্থে নয়, জনগণের স্বার্থে। অনেক আবাসিক এলাকায় উঁচু ভবনগুলোতে আমাদের কর্মীদের ছাদে উঠতে দেওয়া হয় না। এগুলোতে এডিস লার্ভা জমে আছে কিনা দেখব কী করে? প্রথম দিন ড্রোন উড়িয়ে দেখলাম ভবনে একটি সুইমিংপুল। উঠে দেখি মশার লার্ভা কিলবিল করছে। ড্রোন ব্যবহার না করলে তো এসব প্রজননস্থল শনাক্ত করা যেত না। সমালোচনা হবে, এগুলো কানের বাইরে রেখে জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাব।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে মশার জীবনপদ্ধতি বদলে যাচ্ছে, তাই মশা নিধনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুর জন্য বেশি করে বেড রাখতে হবে। এছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফি’র বেশি যেন নেওয়া না হয়।
ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে আসতে হবে। ফার্মেসিতে গিয়ে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ডেঙ্গু আরো মারাত্মক রূপ ধারণ করবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গু রোগীদের সচেতনতার পাশাপাশি বেশি বেশি পানি পানের পরামর্শ দেন তিনি।
ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ গত দুই বছরের তুলনায় দশ গুণ বেশি। ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১০ জনের মধ্যে পাঁচজনই শিশু। এজন্য মশা ও লার্ভা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্কুল–কলেজ খুলেছে। এখানে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। মশা কামড়াতে না পারে মতো ড্রেস কোড নির্ধারণ করতে হবে। তিনি চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর আহ্বান জানান। মো. মফিজল হক শাহ্ বলেন, নালা–নর্দমায় মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি। তবে যেসব নালা–নর্দমা ভরাট হয়ে পানি জমে আছে বা প্লাস্টিকের কৌটা পড়ে পানি জমে আছে, সেখানে মশার লার্ভা পেয়েছি।
কীর্তিমান চাকমা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিত্যক্ত জায়গাগুলো মশার প্রজননস্থল হয়ে উঠেছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার রাখতে হবে।
ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চসিকের পক্ষে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা সেবা দেয়া হচ্ছে। আমরা একদিনে ৬০ জনের পরীক্ষা করে মাত্র ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত পেয়েছি। সুতরাং আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলেই টেস্ট করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে ডেঙ্গু ভালো হয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, মোবারক আলী, আবুল হাসনাত বেলাল, জহরলাল হাজারী, মোহাম্মদ শহীদুল আলম, হাসান মুরাদ বিপ্লব, গোলাম মো. জোবায়ের, কাজী নুরুল আমিন ও নুর মোস্তফা টিনু, চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মো. আতিক উল্লাহ, জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এসএম আলমগীর ও সিডিএর সিনিয়র এস্টেট অফিসার চৌধুরী মোহাম্মদ আবু হেনা মঞ্জু, মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডোনার) সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন প্রমুখ।
মোবারক আলী বলেন, যেসব ভবনে মশার লার্ভা পাওয়া যাবে সেখানে বড় অংকের জরিমানা করে আতঙ্কের জায়গা তৈরি করতে হবে। একই জায়গায় এক সপ্তাহ পরে গিয়ে আবার পরিদর্শন করতে হবে। নয়তো মানুষ সচেতন হবে না। সচেতন হওয়া ছাড়া মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা সম্ভব নয়। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি সিডিএকে অভিযান চালাতে হবে।
ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি সময় কাজ না করে পুরো বছর জুড়ে কাজ করতে হবে। ঢালাওভাবে কাজ না করে কোন ওয়ার্ডে মশার প্রজননস্থল বেশি, কেন বেশি তা চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে।
আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।
সভায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে চসিকের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম জানান, সকল আবাসিক ও মহল্লা কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক বরাবর ডিও লেটার পাঠিয়ে মহল্লা ও আবাসিকে বসবাসরত ভবন মালিক ও ভাড়াটিয়াদের ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করার পরামর্শ দিয়েছেন মেয়র। ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটির মাধ্যমে মহল্লাভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছেন। সিভিল সার্জনের কাছ থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য গ্রহণপূর্বক রোগীর কর্মস্থল ও বসবাসস্থলের আশেপাশে বিশেষ মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গান তৈরি করে ডেঙ্গুবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে। চসিকে বর্তমানে ১০ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড ও ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড মজুদ রয়েছে বলে
Discussion about this post