বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুস। পর্যবেক্ষণে রয়েছে গিনেজ বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডের ম্যানেজমেন্ট টিম।চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ, জুলুস ও মিলাদুন্নবী উদযাপনে মহানগরীকে সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে মোড়ে মোড়ে কালেমাখচিত বর্ণিল পতাকা,ব্যানার, ফেস্টুন তোড়ন নির্মাণ’সহ আলোকসজ্জা করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মোড়, সড়ক ও সড়কদ্বীপে।
আজ ঐতিহাসিক জুলুস!চট্টগ্রামে বিশ্বর সবচেয়ে বড় জুলুসআজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে প্রতি বছরের মতো এবারও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক ৫১ তম জশনে জুলুস নানা আয়োজনের জমকালো অনুষ্ঠানিকতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জশনে জুলুস আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আয়োজনে গাউসিয়া কমিটির সার্বিক সহযোগিতায়
জুলুসে নেতৃত্ব দেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ ও বিশেষ অতিথি সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ।
আল্লানাদের সফর সঙ্গী ছিলেন পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ও আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন’সহ প্রমুখ।
জুলুস র্যালীর তাকদীর হাম নাথ রাসূলের গজলে মুখরিত হয়েছে জুলুস জুলুস ময়দান সারানগর সহ সারা চট্টগ্রামজুড়ে।জুলুসের আগে আলমগী রে সৌদিয়া কাদেরিয়া তৈয়বিয়া খানকা শরীফে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং করা হয় ব্রিফিং শেষে দেশ সুখ শান্তি সমৃদ্ধি ও জাতির দোয়া করা হয়।
জুলুশ সকাল ৯টায় নগরীর ষোলশহর আলমগীর খানকাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয়ে
শহরের ১৭ টি পয়েন্ট ও দশটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পদক্ষিন করে।বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, কাতালগঞ্জ, অলিখাঁ মসজিদ, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারী খাস্তগীর স্কুল মোড়), আসকারদীঘি, কাজির দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি,২নম্বর গেইট হয়ে পুনরায় মুরাদপুর,বিবিরহাট প্রদক্ষিণ শেষে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে শেষ হবে। সেখানে মাহফিল নামাজে যোহর শেষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
জুলুসের রুটগুলোকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সার্বিক শৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছে আনজুমানের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক,গাউছিয়ার স্বেচ্ছাসেবকসিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ পুলিশ প্রশাসন ডিবি’সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।
আয়োজকদের তথ্যে প্রতিবারের মত এবারোও এ বর্ণাঢ্য র্যালিতে কোটির কাছাকাছি ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগম ঘটেছে। প্রতি বছর জুলুসে অর্ধকোটি মানুষের সমাগম হয়ে থাকে।জুলুস বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে স্থান পেলে চট্টগ্রামকেও সম্মানিত করবে।পৃথিবীতে যত জুলুস আয়োজিত হয় তারমধ্যে চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আয়োজিত হওয়া জুলুসটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জুলুস। পর্যবেক্ষণে রয়েছে গিনেজ বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডের ম্যানেজমেন্ট টিম।
১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামে বলুয়ারদিঘী খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জুলসটি বের করে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট।
জশনে জুলুস শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের তৈয়্যব শাহের নির্দেশ ও রূপরেখা অনুসরণে। ১২রবিউল আউয়াল, সকালে আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নূর মুহাম্মদ আল কাদেরীর নেতৃত্বে কোরবানীগঞ্জের বলুয়ারদীঘি পাড় খানকাহ্-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে শেষ হয়েছিল জুলুসটি।
১৯৭৪ সালে দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের তৈয়্যব শাহের নির্দেশ রূপরেখা অনুসরণে বাংলাদেশে প্রথম জশনে জুলুস শুরু হয়। পরবর্তীতে সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ’র নেতৃত্বে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ ১২বছর জুলুসের নেতৃত্বে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা তৈয়্যব শাহ। এরপরে ৩২ বারের অধিক জুলুসের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারই পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলেও বর্তমানে এটি দেশের বিভিন্ন জেলায় পালিত হয়।
ইসলামের শেষ নবি মুহাম্মাদের জন্মদিন তথা ঈদে মিলাদুন্নবীকে কেন্দ্র করে আনন্দ মিছিল বা শোভাযাত্রার মাধ্যমে উদযাপনই জশনে জুলুস নামে পরিচিত৷জশন শব্দটি ফার্সি, যার আভিধানিক অর্থ খুশি/উৎসব বা আনন্দ উদযাপন; জুলুস শব্দটি আরবি জলসা শব্দের বহুবচন যার অর্থ বসা, উপবেশন, পদযাত্রা, মিছিল। জশনে জুলুসের অর্থ আনন্দ মিছিল বা আনন্দ শোভাযাত্রা।
Discussion about this post