ষোল বছর তোমায় দেখিনা কবি নীলিমা আক্তার নীলা

”ষোল বছর তোমায় দেখিনা কবি নীলিমা আক্তার নীলা”
ষোল বছর তোমায় দেখিনা
নীলিমা আক্তার নীলা
তোমাকে যখন বলতাম –
আমি যেদিন তোমায় ছেড়ে চলে যাবো
সেদিন বুঝবে।
তুমি তাৎক্ষণিক আমার মুখ চেপে ধরতে
কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে –
এমন কথা আর কক্ষনো বলবে না
তুমি চলে যাবার আগেই যেন আমার মৃত্যু হয়।
তোমার চোখ গড়িয়ে পানি পড়তো।
এমন নিষ্পাপ ভালোবাসা দেখার জন্যই হয়তো-
বার বার কথাটি বলতে ইচ্ছে হতো আমার।
কী যে ভালোবাসতে আমায়।
মাঝে মাঝে হিসেব মেলাতে ইচ্ছে হতো-
কে, কাকে কতোটা বেশী ভালোবাসি।
আমার একটু জ্বরেই কাবু হয়ে যেতে তুমি
বার বার মাথায় পানি ঢালতে
চুলে হাত বুলিয়ে বলতে –
খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?
হয়তো তোমার এতো ভালোবাসার কারণেই
আমার জ্বর হলে –
আমি নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবতাম।
প্রতিদিন তোমার চমকপ্রদ সারপ্রাইজ
আমাকে আপ্লূত করতো।
টাপুরটুপুর বৃষ্টিতে
আমি আর তুমি কতো ভিজেছি
চাঁদের জোছনায় করিডোরে বসে
কফি খেতে খেতে
তোমার কাঁধে মাথা রাখতাম
মায়াবী কন্ঠে বলতাম-
এতোটা তোমাকে ভালো না বাসলে হতোনা?
যেদিন তোমার বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছিলো,
সেদিনের কথাটা ভীষণ মনে পড়ে আমার
কী যে কেঁদেছিলাম আমি
বার বার বলেছিলাম-
ওর কিছু হয়ে গেলে
আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না,কেউ না
সেদিন আমার কান্নার শব্দে ডাক্তার ও কেঁদেছিল
কেঁদেছিল সমস্ত নার্স।
আজ তোমার প্রিয় কিছু খাবার রান্না করেছি
নিজহাতে তোমার জন্য খাবার নিয়ে যাবো
দুজন একসাথে খাবো
দারুণ একটি সারপ্রাইজ হবে তাই, না?
আমি যত্ন করে অনেক সেজেছি
তোমার দেয়া নীল শাড়িটি পড়েছি
খোঁপায় একগুচ্ছ বেলীফুল
হাতভর্তি চুড়ি
তোমার অফিস শেষে
তোমার হাত ধরে পুরো শহরটা ঘুরে বেড়াবো।
ভাবতেই সমস্ত আনন্দ আমাকে ঘিরে ধরলো।
তোমার অফিসের দরজাটা ভিতর থেকে লক ছিলো
দরজাটা টোকা দিতেই মনে হলো-
কোন একটি মেয়ের কন্ঠস্বর
আমি থমকে গেলাম।
তুমি মেয়েটিকে বলছিলে-
তুমি জানো না আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি
তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
আমি দরজায় টোকা দিলাম
না দরজা খুলছে না
কিছুক্ষণ পর আবারও টোকা দিলাম
তুমি দরজাটা খুলেই বোকা হয়ে গেলে
তোমার পেছনে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে।
আমি হাত বাড়িয়ে খাবারের প্যাকটি দিলাম
বললাম –
খেয়ে নিও।
ক্যালান্ডারের পাতায় আলতো ভাবে হাত রাখলাম,
ষোল বছর তোমায় দেখিনা।