আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিরোধিতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যেসব নেতা চসিক নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়ে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়বেন তাদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে বলেও জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দাপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, দলের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে অভিমান থাকতে পারে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা প্রশমিত হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থায় থাকছে দলটি এবং যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে তাদের নামের তালিকাও কেন্দ্রে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশেষ সূত্র।
দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়তে চান তাদের এ সিদ্ধান্ত দলের প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে অবমাননা করার সামিল বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
অনেকে বলছেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন না দিলে নির্বাচন করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে, নেত্রীর সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচন করা মানে নেত্রীর সাথে করা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। দলের প্রতি যাদের আনুগত্য নেই, তারা দায়িত্ব পেলে দলের জন্য ক্ষতি বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এতে মেয়র ছাড়াও ভোট হবে ৪১ টি সাধারণ এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে। এসব পদে মনোনয়ন পেতে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে।
বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৯ জন এবার তাদের দলের সমর্থন হারিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিতর্কে জড়িয়ে ছিটকে পড়েছেন। শুধু বর্তমান কাউন্সিলর নন, সমর্থনপ্রত্যাশী বিতর্কিতদেরও তালিকায় রাখেনি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে চেয়েছিলেন ৪০৬ জন। তাদের মধ্যে এমন অনেকে দলটির মনোনয়ন চেয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, খুনসহ অভিযোগের শেষ নেই।
বাদ পড়া কাউন্সিলরেরা হলেন ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের গাজী মো. তৌফিক আজিজ, ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের শাহেদ ইকবাল বাবু, ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম, ১১নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২নং সরাইপাড়ায় সাবের আহম্মদ, ১৩নং পাহাড়তলীতে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, ১৪নং লালখানবাজার ওয়ার্ডের এফ কবির মানিক, ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের এস এম এরশাদ উল্লাহ, ২৭নং দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে এইচ এম সোহেল, ২৮নং পাঠানটুলীতে আব্দুল কাদের, ৩০নং পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের মাজহারুল ইসলাম, ৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডের তারেক সোলায়মান সেলিম, ৩৩নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ ও ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের জয়নাল আবেদিন।
বাদ পড়া সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা হলেন- জেসমিন পারভিন, আবিদা আজাদ, আনজুমান আরা বেগম, ফারহানা জাবেদ ও ফেরদৌসি আকবর।
বাদ পড়া বর্তমান ১৫ কাউন্সিলরের মধ্যে দলীয় মনোনয়নের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চান ১২ জন কাউন্সিলর। কিন্তু ১নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন হিরণ ও ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী নন।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করছেন প্রার্থীরা। তাই যারা দলীয় মনোনয়ন পাননি তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিদ্রাহী প্রার্থী হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক শেষ হওয়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে কঠোর অবস্থানে ছিল আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মেনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে ভোটের মাঠে সক্রিয় থাকলে সরাসরি বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দলটি। এমনকি আওয়ামী লীগের দক্ষিণ সিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। উত্তরেও একই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের এ দলীয় সিদ্ধান্তে একইভাবে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অটল আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ৃয়া সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ওয়ার্ডে ৪১জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৪ জনের নাম ঘোষণা করেন।
Discussion about this post