মীরজাদীর ব্রিফিংয়ের তথ্য কতটা সত্য”করোনার ভয়াবহতার মুখে”

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবার করোনার ভয়াবহতার মুখে দেশবাসীর সামনে সর্বশেষ তথ্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনিই করোনা রোগের বিষয়ে এখন রাষ্ট্রের মূখপাত্র। একজন চিকিৎসকই নন, বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্মার্টলি সাহসের সঙ্গে ব্যক্তিত্ববোধ আর দক্ষতায় দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের মানুষ আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। অধীর আগ্রহে রোজ বসে থাকি তার ব্রিফ শোনার জন্য।

 

আজকেও তিনি বলেছেন, নতুন কেউ দেশে করোনায় আক্রান্ত হননি। খুশির সংবাদ, স্বস্তির সংবাদ নিঃসন্দেহে। কিন্তু সংশয় সন্দেহমুক্ত হওয়া যায় না। ইউরোপের উন্নত দেশগুলো যেখানে আজ করোনার ভয়ঙ্কর আক্রমণে বেদনায় নীল, মৃত্যুর পাহাড়, পরাক্রমশালী আমেরিকা যেখানে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি, মৃত্যু আক্রান্ত মিলিয়ে ভয় আতঙ্কের চরমে, পাশের দেশ ভারতে যেখানে রোজ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে সেখানে আমাদের দেশে মীরজাদী সেব্রিনার বক্তব্য কি সত্যি সত্যের উপর দেওয়া? এ প্রশ্ন এসে যায়। গণমাধ্যমে যে খবর আসছে তার সাথে বৈপরীত্য নেই তো? তথ্যের ঘাটতি নেই তো? সারাদেশে করোনা রোগী সনাক্ত ঠিকমতো হচ্ছে তো? এসব প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে আজ গোটা দেশ এক মুহুর্তে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে। একাত্তরের পর এমন ঐক্য দেখেনি জাতি। চীন করোনায় আক্রান্তের যে তথ্য দিয়েছে বা একনায়ক পুতিনের রাশিয়া দিচ্ছে তার সত্যতা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে প্রশ্ন আছে।

 

আমরা তথ্যের ঘাটতি যেমন চাই না, তেমনি সত্য পুরো উন্মোচিত হোক মীরজাদী সেব্রিনা সেটাই চাই। করোনার অভিশাপের দায় কারো নেই। প্রকৃতির ভয়াবহ অভিশাপে কতজন আক্রান্ত কতজন মৃত সেই সত্য জানলে লড়াই আরও জোরদার হবে। গতিপ্রকৃতি নিয়ে মানুষও সচেতন হবে। আর যদি কেউ আক্রান্ত সত্যিই না হয় তাহলে কেনো আমরা এখনো ভালো আছি তার কারণ জানালে আমাদের মানসিক শক্তিও বাড়বে।

অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা একজন বাংলাদেশি রোগতত্ত্ববিদ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দায়িত্বশীল পরিচালক। ফাউন্ডেশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের ফেলো। তার কাছে প্রশ্ন তাই অনেক। আর কেউ আক্রান্ত নন, এটা নির্মোহ সত্য কিনা জানার আগ্রহ প্রবল।

 

সকালে খবর পেলাম শুক্রবার রাতে বগুড়ায় একজন রোগী জ্বর কাশি, সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর অনেক অনুনয় বিনুনয়কে উপেক্ষা করে করোনা আতঙ্কে একজনও তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াননি। তাঁর পরিবারসহ আরও ২৫টি পরিবার হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।

 

গত মঙ্গলবার একই ঘটনা রাজধানীতে ঘটেছে। ঢাকার একটি হাসপাতালের ক্যাশিয়ার পদে চাকরি করা ওই ব্যক্তি স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তিনি ঢাকাতেই থাকতেন। সর্দি-জ্বর শ্বাসকষ্টে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে মৃত্যুর পর কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির মৃত্যুসনদে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো কিছু উল্লেখ করেনি। ভোররাতে মানিকগঞ্জ ঘিওর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়। পুরো ওই এলাকা এখনও লক ডাউন।

 

কুষ্টিয়ায় এক নবজাতক সিঙ্গাপুর ফেরত বাবার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। রোগীর হিস্ট্রি গোপন করে চিকিৎসা,পরে বাবা বিদেশ থেকে এসেছে জানাজানি হলে তিনি পলাতক ছিলেন। বাবাসহ ওই পরিবারের ৫ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

 

বিদেশ ফেরত অনেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকে পালিয়ে গেছে, আত্মগোপনে আছে। কক্সবাজারে যে নারী হাসপাতালে করোনা রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল তাঁদের সমস্ত পরিসংখ্যান কি আপনার হাতে আছে? তারমানে মীরজাদীর হিসাবের বাইরেও অনেকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে কি?

আপনি হয়তো কেবল আইইডিসিআর এ পরীক্ষার পর যাদের রক্তে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে কেবল তাঁদের কথা বলছেন। কেবল আপনার হাতে থাকা পরিসংখ্যান থেকেই কথা বলছেন, সারাদেশের খবর হয়তো আপনার হাতে নেই। কিন্তু বিষয়টি এক প্রকারের ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে।

দুদিন আগে রাজধানীর বাসিন্দা আতিকা রুমা অভিযোগ তুলেছেন, অনেক চেষ্টার পর ক্ষমতাবানদের হস্তক্ষেপে করোনা টেস্ট করাতে সক্ষম হয়েছেন। যা সবার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।​​​​​​​

 

পরিসংখ্যানের বাইরে একটির পর একটি মৃত্যু সংবাদ এবং পৃথক পৃথক এলাকা লকডাউনের খবর প্রকাশের পর জনমনে সন্দেহ আর অবিশ্বাস দানা বাঁধতে শুরু করেছে। সেই সাথে অজানা শঙ্কা এসে অসহায় মানুষকে আরও বেশি আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। চিকিৎসকদের ভাষায় সারাদেশে প্রয়োজনীয় কিটস এর সঙ্কট, অপ্রতুলতা এটা জানার পরে মানুষের সন্দিহান হওয়া স্বাভাবিক। কেবল আমি নই এই মুহূর্তে সমস্ত দেশের মানুষ আপনার উপর আস্থা রাখে আপনার মুখের কথা বিশ্বাস করতে চায়।

 

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, সারাদেশে পরীক্ষা ও আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তথ্যসহ কন্ট্রোলরুম খোলা না হলে আপনি কি পুরো সত্য ব্রিফিংয়ে দিতে পারবেন? নাকি অর্ধসত্য আসবে? আমার মতোন অনেকের ধারণা ও বিশ্বাস আপনার ব্রিফিংয়ে সবকিছু আরও পরিষ্কার করা উচিত। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়লে যেমন পুরো সত্যসহ তার কারণ জানানো দরকার তেমনি না হলে বা না বাড়লে তারও ব্যাখ্যা দরকার ‘কপি” ” পূর্বপশ্চিম”