ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ আগস্ট। এরপর যাবেন অবসরে। খালি হবে ডিএমপি কমিশনারের পদ। ইতোমধ্যে কমিশনারের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। মন্ত্রণালয়েও শুরু হয়েছে বাছাই প্রক্রিয়া।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপি কমিশনারের পদটি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল পদগুলোর মধ্যে একটি। ইতোমধ্যে কমিশনার হওয়ার দৌড়ে কয়েকজনের এগিয়ে থাকার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্য থেকেই একজন হচ্ছেন নতুন ডিএমপি কমিশনার।
সূত্র জানায়, ঢাকার কমিশনার হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে সিআইডির প্রধান হিসেবে কর্মরত। নীতি নির্ধারক পর্যায়ে তার কমিশনার হওয়ার আলোচনা সবচেয়ে বেশি।
শফিকুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন। তার বাড়ি চুয়াঙ্গা। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। বিএনপি শাসনামলে তাকে দেশের দুর্গম এলাকায় শাস্তিমূলক বদলি দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়। সরকারের কাছে ‘ক্লিন ইমেজ’র অফিসার হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি থাকায় ঢাকার সব জেলায় ইতিবাচক পরিস্থিতি রেখেছিলেন। ‘ক্লিন ইমেজ’ ও ‘ডেকোরেটেড অফিসার’ হিসেবে কমিশনারের পদের জন্য এগিয়ে আছেন তিনি।
এ পদে দ্বিতীয় যে ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপির (চলতি) দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। গত ১৬ মে তাকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির পদ থেকে পুলিশ সদর দফতরে অতিরিক্ত আইজিপির চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়। তিনি বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৯ সালে পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর ‘গুডবুকে’ নাম আছে মামুনের। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যদি ডিএমপি কমিশনার নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী আইজিপির মতামত নেন তাহলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনই ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পাবেন।
ঢাকার দায়িত্ব পাওয়াদের তালিকায় শোনা গেছে অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি) মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসানের নাম। গত ৬ মে কঙ্গোতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মিরপুর পুলিশ স্টাফ কলেজের তৎকালীন রেক্টর (অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক) রৌশন আরা বেগমের পদে স্থলাভিষিক্ত হন নৌপুলিশের ডিআইজি শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান।
তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি ও সর্বশেষ নৌপুলিশের ডিআইজির দায়িত্ব পালন করেন। তার বাড়ি খুলনায়।
কমিশনার হওয়ার দৌড়ে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি শাহাব উদ্দীন কোরেশী। তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার জন্ম ১৯৬১ সালের ১৯ অক্টোবর। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। তিনি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর তাকে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ ও উন্নয়ন) এর দায়িত্ব দেয়া হয়।
কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, শাহাব উদ্দীনকে কমিশনার করতে তদবির করেছেন বর্তমান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তবে মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
কমিশনারের দৌড়ে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র চারজন কর্মকর্তার নামেও গুঞ্জন শোনা গেলেও জুনিয়র দুই কর্মকর্তা রয়েছেন এ প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতায় বর্তমানে তাদের অবস্থান অনেক দূরে থাকলেও যদি কমিশনার নিয়োগে কোনো চমক থাকে তাহলে তাদের মধ্যে কেউ একজন হতে পারেন ডিএমপি কমিশনার।
তারা হচ্ছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তাদের উভয়ের বাড়ি গোপালগঞ্জ। মনিরুল ইসলাম ১৫তম বিসিএস এবং হাবিবুর রহমান ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
তাদের কমিশনার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও তাদের যেকোন একজনকে ‘ভারপ্রাপ্ত কমিশনার’ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মনিরুল ইসলাম ঠান্ডা মাথায় যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর রীতিমতো জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করেন। জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তার ভালো অর্জন রয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই এ পদে তাকে দেখা যেতেও পারে।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এটা তাদের ব্যক্তিগত আলোচনা হতে পারে। এ দু’জনের কাউকে ডিএমপি কমিশনার কিংবা ভারপ্রাপ্ত ডিএমপি কমিশনার করার কোনো বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়নি।
কে হচ্ছেন পরবর্তী ডিএমপি কমিশনার? জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন।
অনেক সিনিয়র অফিসাররাই এ পদটি পেতে চান। তবে পুলিশ হিসেবে কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় এ পদটিতে নিয়োগ দেয়া হয়। সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে যে কেউ এ দায়িত্ব পেতে পারেন।’
ডিএমপির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। ডিএমপি গঠনের আগে ঢাকা জেলা পুলিশ এ শহরের নাগরিক শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখভাল করত। বর্তমানে ডিএমপির অধীনে মোট ৫০টি থানা রয়েছে।
Discussion about this post