করোনাভাইরাস বার বার নিজের জিনোম পরিবর্তনের পাশাপাশি নানা দেশে নতুন নতুন উপসর্গ তৈরি করছে মানুষের দেহে।যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নতুন একটি উদ্বেগজনক উপসর্গ চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা। সেখানে অনেক করোনা আক্রান্ত রক্ত জমাট বেধে মারা যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা অঙ্গরাজ্যের আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসাধীন ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে রক্ত জমাট বাধার এই লক্ষণ দেখা গেছে। অ্যান্টিকোয়াগুলেন্টস (রক্তের ঘণত্ব কমানোর ওষুধ) প্রয়োগের পরও রক্ত জমাট বেধে মারা গেছেন তারা।
ইমোরি ইউনিভার্সিটির প্রধান চিকিৎসক ডা. ক্রেইগ কপারস্মিথ বরাত দিয়েমার্কিন গণমাধ্যম দ্য আওয়ার জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস ফুসফুসের পাশাপাশি হৃদযন্ত্র, যকৃৎ, কিডনীসহ শরীরের অন্যান্য অংশও আক্রান্ত করছে বলে বিভিন্ন দেশ থেকে খবর আসছে। কিন্তু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে রক্ত জমাট বেধে মারা যাওয়ার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রেই প্রথম ঘটছে।
ব্রুকলিন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. পল সন্ডার্স দ্য ডেইলি মেইলকে জানান, তার হাসপাতালেও অনেক করোনা আক্রান্ত রক্ত জমাট বেধে মারা গেছেন।কিছু রোগী সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার পরও মারা যাওয়ার পেছনে এই রক্ত জমাট বাধা দায়ী থাকতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে, করোনাভাইরাস বড় ও ছোট সকল প্রকারের শিরায় রক্ত জমাট বাধার সমস্যা সৃষ্টি করে। রোগীদের দেহের বিভিন্ন অংশে এই লক্ষণ দেখা গেছে। ভাইরাসটির একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। এই ক্ষমতার বলে ভাইরাসটি হৃদযন্ত্র আক্রমণ করতে পারে।
এ বিষয়ে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজি বিষয়ক অধ্যাপক ডা. রবার্ট বোনো বলেন, করোনা ও ফ্লু একরকম নয়। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখলে করোনার দেহ থেকে অসংখ্য স্পাইক দেখা যায়। ওই স্পাইকগুলো হচ্ছে প্রোটিন। সেগুলো যে কোষকে আক্রান্ত করে ওই কোষেই রিসেপ্টর খুঁজে বেড়ায়। বিশেষ করে ফুসফুসের কোষগুলোয় রিসেপ্টর খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু ওই রিসেপ্টরগুলো রক্তনালীতেও থাকে। তাই ভাইরাসটি ফুসফুস ও রক্তনালী উভয় অংশই আক্রান্ত করে পারে।
তিনি বলেন, ভাইরাসগুলো রক্তনালীতে নিজেকে সংযুক্ত করার পর, তাদের প্রোটিক স্পাইকগুলো রক্তনালী ও হৃদযন্ত্রের পেশির ক্ষতি সাধন করতে পারে। এতে ‘হাইপারকোয়াগুল অবস্থা’ তৈরি হতে পারে। যার দরুণ রক্ত জমাট বেধে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর আগে, চীনে এক গবেষণায়, ৪১৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীর হৃদযন্ত্রে ক্ষত দেখা গেছে।
Discussion about this post