করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসায় দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি) হাসপাতাল আমাদের জন্য বিশাল সাপোর্ট। এখানে ২০১৩টি বেড নিয়ে অনেক সুবিধা থাকছে।
এটি আমাদের একটি বড় সেন্টার। আশা করছি এখানে রোগীদের বড় একটি সার্পোট দিতে পারবো। অবস্থান, ভৌগোলিক ও পারিপার্শ্বিক মিলিয়ে এটি একটি বড় সুবিধা।
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) আইসিসিবি হাসপাতাল চত্বর পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যসচিব বলেন, দেশের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিশাল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে এগিয়ে এসে এই সার্পোট দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ। এখানে অনেক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া যাবে।
দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করতে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখানে অন্যান্য সুবিধা ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এই মাসে্র শেষেই এখানে চিকিৎসাসেবা শুরু করতে পারবো। এটা চালু হলে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের
চিকিৎসা, আইসোলেশন ও অন্য পরিচর্যার খুব ভালো একটি ব্যবস্থা হবে।
‘দেশ ও
মানুষের কল্যাণে’ এই স্লোগানের আলোয় পথচলা বসুন্ধরা গ্রুপ করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগকালেও দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে এসেছে। দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকায় সম্প্রতি সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির ভিত্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর একটি দল পরির্দশন করে পরবর্তী সময়ে এটাকে অস্থায়ী হাসপাতাল বা আইসোলেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কোভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যতদিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে ততদিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসক,
নার্স ও স্বাস্থ্যসহকারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, চিকিৎসক ও নার্সদের যাতে কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকে সেই বিষয়টি মাথায় নিয়েই এখানে চিকিৎসা কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকেই প্রটোকলও করা হয়েছে। কীভাবে হাসপাতালে যাবে, কীভাবে রোগী দেখবে, তাদের কীভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে এসব বিষয়ে।
আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করছি, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারীরা যেন আক্রান্ত না হয়। বা তাদের আলাদা করে রাখা যায়। পালাক্রমে রোস্টারের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে গুরুত্ব দিচ্ছি। এখানে প্রাথমিক পরিচর্যা কেন্দ্রের মতো করেছি। অক্সিজেন সুবিধা থাকবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তো আছেনই, তাদের সাহায্য নেওয়া হবে।
বসুন্ধরা হাসপাতাল চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী আনা হবে কি-না জানতে চাইলে স্বাস্ব্য সচিব বলেন, সেটা রোগী প্ল্যানিংয়ের উপর নির্ভর করবে। কত রোগী আক্রান্ত হচ্ছে, কি ধরনের আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তের প্রখরতা কত সেসব দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান সরোয়ার এসপিপি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি বলেন, ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। গত কয়েকদিন ঝড়বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ ছিল। আশা করছি বাকি ১০ শতাংশ কাজ ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পরিকল্পনা করা হচ্ছে কোথায় অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা যায়। এটা আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলেই দ্রুত স্থাপন করা হবে।
এসময় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হামিদ, নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরীসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসক ও নার্স চেম্বারগুলোর কাজ শেষের দিকে। শেষ পর্যায়ে রয়েছে টয়লেট নির্মাণ। বসানো হয়েছে হাসপাতালের এসি, চেয়ার ও রোগীদের শয্যা। এখন শুধু ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে।
প্রাথমিকভাবে এখানে দুই হাজার ৭১ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করার জন্য কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে প্রয়োজন দেখা দিলে এটিকে পাঁচ হাজার শয্যায় রূপান্তর করা যাবে। এ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে বাংলাদেশে এটিই হবে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য বৃহত্তম সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২০
Discussion about this post