তিনদিন চললেও সোমবার (৪ মে ) থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটের পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন আর চলবে না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মাত্র তিনদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গেল সদ্য চালু হওয়া পণ্যবাহী ট্রেনের এই বিশেষ সার্ভিস।
কারোনার এই সময় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১ মে থেকে চালু করা হয় পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন। এই ট্রেনের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য কোনো মধ্যসত্ত্বভোগী ছাড়াই সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
এতে একদিকে যেমন কৃষকরা নায্য দাম পাবেন অন্যদিকে খাদ্য সংকটও কাটবে এমন উদ্দেশ্য থেকে চালু হলেও তিনদিনের মাথায় বন্ধ হয়ে গেল পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস।
চট্টগ্রাম স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী গনমাধ্যমকে জানান, প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছিল নতুন চালু হওয়া পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনে। তাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
করোনার এই সময় খাদ্য সংকট দূর করতে বা কৃষকের নায্য মূল্য নিশ্চিতে এই ট্রেন চালু হলেও কৃষকের সাড়া না থাকায় তিনদিনের মাথায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩৪৬ কিলোমিটার রেলপথ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পৌঁছাতে তেল খরচ হয় প্রায় ৬০০ লিটার। এভাবে আপ-ডাউনে তেল পুড়ে প্রায় ১২০০ লিটার।
রেলের ইঞ্জিনে ব্যবহৃত তেল সাধারণ ডিজেল নয় ইঞ্জিন কার্যকর রাখতে এখানে ব্যবহার করা হয় হাই পারফরমেন্স (এইচপি) ডিজেল। এই ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৭০/৭২ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের তেল খরচ বাবদ গুণতে হয় ৮৪/৮৬ হাজার টাকা।
আর একটি পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ট্রেন পরিচালক ২ জন, রানিং পার্সেল ক্লার্ক ১ জন, লোকমাস্টার ও সহ-লোকমাস্টার ২ জন ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৭/৮ জন সদস্য থাকে। এতে মোট স্টাফ থাকে অন্তত ১৩/১৪ জন।
রেলের নিয়িম অনুযায়ী, রেল কর্মাচারীদের মাইলেজ ও আর এনবির সদস্যদের টিএ প্রদান করা হয়। এই ১৩/১৪ জন কর্মচারীকে যাওয়া আসা বাবদ দিতে হয় ১৮/২০ থেকে হাজার টাকা।
তেল খরচ ও রেলওয়ে কর্মচারীদের মাইলেজ প্রদান করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনে আপ ডাউনে খরচ হয় ১ লাখেরও বেশি। কিন্তু এই ট্রেন থেকে প্রতিদিন আয় হয়েছে মাত্র ১০/১২ হাজার টাকা।
রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিটি পার্সেল এক্সপ্রেস ট্রেনে আপ ডাউনে লোকসান হচ্ছে ৮০/৯০ হাজার টাকা। তাই এটা বন্ধ করা হয়েছে। এই লাগেজ ট্রেনে বগি থাকে ১৯/১২টি আর প্রতি বগিতে ২৩০/২৪০ টন পণ্য পরিবহন করা সম্ভব।
কিন্তু সেই পরিমাণ পণ্যের সিকি ভাগও পাওয়া যায়নি এই ক’দিনে। আর উদ্দেশ্য ছিল কৃষিপণ্য পরিবহনের। কিন্তু তিনদিনে চট্টগ্রাম থেকে একদিনেও সামান্য পরিমাণও তা পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় ট্রেনটি বন্ধ না করে উপায় ছিল না।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ গনমাধ্যমকে জানান, মালামালের অভাবেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই দুটি ট্রেন। এমনিতেই যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ থাকায় রেলওয়ের লোকসান হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পণ্যবাহী লাগেজ ট্রেন চালু করা হলেও তা সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়েছে, এমতাবস্থায় তা বন্ধ না করলে করোনাকালে রেলের লোকসানের পাল্লা আরও ভারীই হত।