ভূরুঙ্গামারীর এক ব্যক্তিকে কথিত আল্লাহর ওলির খপ্পর থেকে উদ্ধার করলেন এসি ফারুক মাঈদুল ইসলাম মুকুল,

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে কথিত আল্লাহর ওলির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়ানো এক সবজি বিক্রেতাকে উদ্ধার করলেন ভূরুঙ্গামারীর কৃতি সন্তান রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (মাহিগঞ্জ জোন) এর সহকারী কমিশনার ফারুক আহাম্মেদ।

 

পেশাগত দায়িত্বে অবিচল থেকে নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় আবারো তাকে প্রশাংসায় ভাসাচ্ছেন ভূরুঙ্গামারীর মানুষ। শুক্রবার (২৯ মে) এসি ফারুকের নেতৃত্বে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এই চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-

 

১।রিয়াদ হাসান রকি ওরফে রায়হান (২০), পিতা- আব্দুল করিম, ২। মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম (৩৫), পিতা- মৃত অাফসার আলী, ৩। আজহার শেখ (৩২) পিতা- মজিবর রহমান শেখ,

 

৪। রফিকুল ইসলাম রিপন (৪৫), পিতা- লুৎফর রহমান মন্ডল। এসময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১১টি মোবাইল ফোন সেট, বিভিন্ন অপারেটর এর সিম কার্ড, সোনালী রঙের মাটির মূর্তি, বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের নথিপত্র ও নগদ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই গোবিন্দগঞ্জের তালুক কানপুর, নাকাই ও বাজুনিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

 

ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের হোচারবালা গ্রামের মোঃ আমজাদ আলীর ছেলে সবজি বিক্রেতা মোঃ শফিকুল ইসলামের মাহিগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতারিত শফিকুল ইসলাম জানান, গত ৬ মে রাত ১২ টার দিকে ০১৪০৬৮১৬৮৪১ নম্বর থেকে আল্লাহর ওলি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাকে নামাজ রোজা, দান খয়রাত ও সৎ পথে চলার জন্য ওয়াজ নসিহত শুরু করে।

 

কথিত আল্লাহর অদৃশ্য ওলি কোরআন ও হাদিসের আলোকে তাকে বোঝায় যে আল্লাহ তাকে কবুল করেছেন এবং তার ভবিষ্যৎ উন্নতি নিশ্চিত। এর পর তাকে বগুড়ার শাহ সুলতান মাজারে কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ দান করা বাবদ তার কাছে বিকাশের মাধ্যমে ৫০০ টাকার দাবি করে। এর পর উক্ত ব্যক্তি গভীর রাতে ফোন করে বলেন, “আল্লাহপাক তোর উপর সন্তষ্ট হয়েছেন তিনি তোকে অঢেল ধন সম্পদ, টাকা পয়সা দান করবেন।”

 

এর পর মাজারে ভক্তদের খাওয়া দাওয়া ও খাদেমদের সেলামি বাবদ আরো বেশ কিছু টাকা আদায় করে নেয়। দান করে তা প্রকাশ করলে বিনিময়ে সে কিছুই পাবে না বরং তার মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখাতে থাকে কথিত আল্লাহর ওলি। সবশেষে হাঁড়ি ভর্তি স্বর্ণের মোহর ও স্বর্ণের মুর্তি দেয়ার আশ্বাস দিয়ে উক্ত চক্রটি তার কাছ থেকে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

 

মূর্তি দেওয়ার নাম করে রংপুরের সাত মাথার নির্জন জায়গায় তার জন্য একটি প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেলে রেখে যায় তারা। রংপুরে গিয়ে সে প্যাকেটটি সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসে। শর্ত অনুযায়ী ৭ দিন পরে প্যাকেট খুলে সে সোনালি রঙের একটি মাটির মূর্তি দেখতে পেয়ে তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। এতোদিনে সে ব্যবসার মূলধনসহ ধার দেনা, জমি জমা বন্ধক রেখে সে মোট ১ লক্ষ ৮ হাজার ৫ শত টাকা হুজুরকে প্রদান করে ফেলেছেন।

 

ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম বিষয়টি দৈনিক যায়যায় দিন ও দৈনিক নতুন কাগজের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রতিনিধিকে অবগত করেন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত ভূরুঙ্গামারীর কৃতি সন্তান এএসপি ফারুক আহাম্মেদকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি রংপুর মাহিগঞ্জ থানায় ভিক্টিমকে দিয়ে ২৭/৫/২০ ইং, ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারা পেনাল কোড এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৩০(১)(ক) ধারায় একটি মামলা রুজু করেন।

 

মামলার প্রকুত রহস্য উন্মোচন ও জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার লক্ষ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় সহকারী পুলিশ কমিশনার (মাহিগঞ্জ জোন) মোঃ ফারুক আহম্মেদ বিভিন্ন আঙ্গিকে নানা উৎস থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করেন তিনি।

 

পরবর্তীতে ২৮/০৫/২০ ইং এসি ফারুক আহাম্মেদ এর নেতৃত্বে মাহিগঞ্জ থানার একদল চৌকস পুলিশ অফিসার গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিন রাত ব্যাপক অভিযান চালিয়ে মামলার মূল হোতা ৪ জনকে গ্রেফতার করেন। এ বিষয়ে ২৯/০৫/২০২০ খ্রি. রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক প্রচারিত এক প্রেসনোটে বলা হয়, চক্রটি বিভিন্ন

 

মোবাইল অপারেটরদের এজেন্ট ও ডিষ্ট্রিবিউটরদের সহযোগিতায় ভুয়া সিম সংগ্রহ করে রমরমাভাবে এই প্রতারণার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি) এ্যাজেন্টদের যোগসাজশে প্রতারকরা লক্ষ লক্ষ টাকা ক্যাশ আউট করে নিচ্ছে। প্রেস ব্রিফিং আরও বলা হয়, ভুয়া সিম বিক্রি বা সিম জালিয়াতি বন্ধ না করলে এ ধরনের ডিজিটাল অপরাধ বন্ধ করা যাবে না।

 

অপরাধ কাজে সিমের অপব্যবহার রোধকল্পে একজন ব্যক্তিকে একটি এনআইডির বিপরীতে সর্বোচ্চ ০৫ টি সিম নিবন্ধনের নিয়ম করা দরকার বলে মনে করেন তাঁরা। প্রতারণার বিষয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার ও লোভ নিবারণ করার আহব্বান জানান এসি ফারুক আহমেদ। মামলার রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যা করেছি সেটা আমার পেশাগত দায়িত্ব থেকেই করেছি।

 

তবে আমার নিজের এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে একটু বাড়তি আনন্দ বোধ করছি। এসময় তিনি অভিযান পরিচালনায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলিম মাহমুদ বিপিএম, উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ)

 

কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওসার পিপিএম এর প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানান । মাহিগঞ্জ থানার ওসিসহ অভিযানে অংশ নেয়া সকল পুলিশ অফিসার ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদেরকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।