চট্টগ্রাম প্রবর্তক মোড়ে বাচ্চুর ‘রূপালি গিটার’ উদ্বোধন সন্ধ্যায়’

রুপালি গিটার ফেলে/ একদিন চলে যাব দুরে, বহুদূরে/ সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো গোপন করে,’ ব্যান্ড সংগীতে এই অমর গানটি গেয়েছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। এলআরবি ব্যান্ডের ভোকাল ও লিড গিটারিস্ট এবং দেশের ব্যান্ড সংগীতের পুরোধা আইয়ুব বাচ্চু গত বছরের ১৮ অক্টোবর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।

ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেও চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোডের বাইশ মহল্লার চৈতন্য গলি কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশেই ২০ অক্টোবর আইয়ুব বাচ্চুকে সমাহিত করা হয়।

কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা বরেণ্য শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ফেলে যাওয়া রূপালি গিটার ফিরে আসছে, এই নগরে। শিল্পীর স্মৃতি স্মারক হয়ে অপলক নেত্রে চেয়ে থাকবে ভক্তদের দিকে। নিজ জন্মভূমে স্মৃতিময় রূপালি গিটার প্রতীক হয়ে থাকবে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও হৃদ্যতার প্রতীক হয়ে। চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়ে বসানো হয়েছে খ্যাতিমান শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর ‘রূপালি গিটার’।

ইতোমধ্যে গিটার স্থাপন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে।

আইয়ুব বাচ্চুর এক শোকসভায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন আইয়ুব বাচ্চুর নামে চট্টগ্রামে নগরে স্থাপনা নির্মাণের ঘোষণা দেন।

এরই অংশ হিসেবে প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক এক মাসে আগে চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়ে ১৮ ফুট উঁচু দৃষ্টিনন্দন প্রতীকী ‘রুপালি গিটার’ স্থাপনকাজ শেষ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

দেশের কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণীয় করে রাখতে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় স্টিলের তৈরি এই প্রতীকী ‘রুপালি গিটার’ উদ্বোধন করা হবে।

জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আইয়ুব বাচ্চু একাধারে গায়ক, গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী ছিলেন। দেশের জনপ্রিয় এ সংগীত ব্যক্তিত্ব চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান। এ বন্দরনগরীতেই তার বেড়ে ওঠা। গত বছর চট্টগ্রামের গর্বিত এই সংগীত ব্যক্তিত্বের প্রস্থান সংগীতাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস দেশের সংগীতাঙ্গন এগিয়ে গিয়েছিল। তাকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই ‘রূপালি গিটার’র প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে।

যেখানে আইয়ুব বাচ্চুর কথা লেখা থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চট্টগ্রামের কিংবদন্তি এই শিল্পীকে জানবে। পাশাপাশি ভালো কিছু করলে দেশের মানুষ তাকে সারা জীবন মনে রাখবে, সেটাও মেসেজ পাবে নগরবাসী জানান মেয় ।’

এই প্রতীকী ‘রূপালি গিটার’ প্রতিকৃতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম।

চসিক সূত্রে জানা যায়, চসিকের সৌন্দর্যবর্ধন কাজের অংশ হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের গোলপাহাড় মোড় থেকে প্রবর্তক মোড় পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের অধীনে এই প্রতীকী রুপালি গিটার স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে গত বছরের শেষদিকে চসিকের সঙ্গে অডিওস ইঙ্ক ও স্ক্রিপ্ট’র চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী এই প্রকল্পের অধীনে প্রবর্তক মোড় হতে গোলপাহাড় মোড় পর্যন্ত মিড আইল্যান্ড, উভয় পাশের ফুটপাত, গোল চত্বরসহ প্রায় ৪৫০ মিটার এলাকায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে নানা সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করার কথা রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের সন্তান। স্মৃতিতে জাগরুক রাখতে এবং তাঁর অমলিন স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কারণ একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে তো তাঁর খ্যাতি আছেই, পাশাপাশি একজন গিটারিস্ট হিসাবেও তাঁর খ্যাতি ছিল ঈর্ষণীয়। গিটারের তারে যাদুকরী সুরের মূর্ছনা তোলার মত শিল্পী হিসাবে তিনি ছিলেন অনন্য।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু গত বছরের ১৮ অক্টোবর চলে যান না ফেরার পথে। গিটারে আঙুলের স্পর্শ আর অসাধারণ গায়কিতে তিনি কেবল সঙ্গীত অনুরাগীদের মাতোয়ারা করেননি, দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতকে অন্য মাত্রায় উন্নীত করেছেন। গিটারের সুরের সঙ্গে কণ্ঠের কারুকার্যে এ দেশের অগণিত সঙ্গীতানুরাগীদের হৃদয়ে ঝড় তুলেছিলেন সঙ্গীত আঙিনার এই রাজকুমার। কেবল দেশে নয়, বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছেও তিনি বাংলাদেশের ব্যান্ডের গানকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

১৯৭৭ সালে সঙ্গীত জীবন শুরু করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে তিনি ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। তার প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এরপর যোগ দেন সোলেস। ১৯৮০ থেকে পরবর্তী এক দশক এই ব্যান্ডে যুক্ত ছিলেন। সোলস ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে নিজে গঠন করেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। প্রথমে এলআরবির পূর্ণ অর্থ ছিল লিটল রিভার ব্যান্ড। পরে এই নামে অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি ব্যান্ড থাকায় বদলে করা হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।

১৯৮৬ সালে ‘রক্তগোলাপ’ নামে তার প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ পায়। আর এলআরবির প্রথম অ্যালবাম হল এলআরবি (১৯৯২)। এরপর এ ব্যান্ডের সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২) প্রকাশ পায়।

একক অ্যালবামের মধ্যে রক্ত গোলাপের পর রয়েছে- ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কী! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)।

তাঁর খ্যাতি পাওয়া গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘চলো বদলে যাই’, ‘রুপালি গিটার’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ইত্যাদি