সবকিছু খুলে দেওয়ার পর আজ থেকে সরকার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। যদি দেখা যায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, তাহলে আবার সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তবে এবার ছুটি নয়, সরকার কঠোর লকডাউন করবে, যেখানে মানুষের সব ধরণের চলাচলের উপর নিষে’ধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বিদায়ী স্বাস্থ্যসচিব আসাদুল ইসলাম, করোনা মোকাবেলা সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. শহিদুল্লাহ, কমিটির সদস্য অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান এবং কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ডা. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিব তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে ১০ দফা নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছু খুলে দিয়েছি, তার মানে এই না যে, এভাবেই চলতে থাকবে। যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য যদি হুম’কি সৃষ্টি হয়, তাহলে আবার লকডাউন দেওয়া হবে। সেই ব্যবস্থা সরকার যে কোনো সময় নিতে পারে।
আগে যে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছিল, সেই ছুটিতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানেনি এবং যেভাবে সামাজিক দূরত্ব বজার রাখার দরকার ছিল সে ব্যাপারে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব ছিল। প্রধানমন্ত্রী এই বৈঠকে ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সবকিছু খুলে দেওয়ার পর এই ১০ দফা নির্দেশনা প্রতিপালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যে নির্দেশনাগুলো প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে-
১. স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে
যারা বের হবে তাদেরকে অবশ্যই মাস্ক-গ্লাভস পরতে হবে এবং অফিস-আদালতগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাবান এবং পানি রাখতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে স্বাস্থ্যবিধিগুলো দিয়েছে সেগুলো যেন প্রতিপালিত হয়, তা নজরদারির মধ্যে আনতে হবে।
২. সভা-সমাবেশ, জমায়েত হবে না
এখনই কোন ধরনের সভা-সমাবেশ, জমায়েত, পুনঃমিলনী বা অনেক মানুষ জমায়েত হতে পারে এ ধরনের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান করা যাবে না।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
আপাতত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৪. অযথা পরীক্ষা নয়
দেখা যাচ্ছে, করোনা পরীক্ষায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অযথা পরীক্ষা করাচ্ছেন। এতে টেস্টিং কিটের উপর চাপ বাড়ছে। এজন্য যাদের শুধু উপসর্গ আছে, শুধু তাদের পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
৫. হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে হবে
মৃদু উপসর্গ যাদের আছে তারা যেন হাসপাতালে ভর্তি না হন, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নত দেশগুলোতে মৃদু উপসর্গের চিকিৎসা বাড়িতেই করছে। কাজেই জটিল রোগী ছাড়া হাসপাতালে যেন কেউ ভর্তি না হয় সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
৬. সচেতনতা বাড়াতে হবে
আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং এই সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে সম্পৃক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
৭. বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে
করোনা চিকিৎসা বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার এবং এজন্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে। কাজেই বেসরকারি হাসপাতালগুলো যেন করোনা চিকিৎসার নামে ব্যবসা না করে সেটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
৮. গণপরিবহন মনিটরিং করতে হবে
গণপরিবহনগুলোর ব্যাপারে যে নির্দেশনা দিয়েছে যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি নির্দেশনাগুলো যেন প্রতিপালিত হয় সে ব্যাপারে মনিটরিং করতে হবে।
৯. গবেষণা বাড়াতে হবে
সামাজিক সং’ক্রমণ যেভাবে বিস্তৃত হয়েছে, সেই বিস্তৃতির প্রেক্ষিতে যে স্থানগুলোতে বেশি সং’ক্রমণ হচ্ছে, যে স্থানগুলোতে আক্রা’ন্তের সংখ্যা বেশি সেই জায়গাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
১০. নিয়মিত পরিস্থিতি মনিটরিং করতে হবে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত করোনা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে হবে এবং পরিস্থিতি যখনই অবনতি হবে সঙ্গে সঙ্গে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
Discussion about this post