চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটার বড়ুয়া ভবনের বিস্ফোরণ গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকেই ঘটেছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। যদিও এর আগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তাদের প্রতিবেদনে বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্যাস লাইন লিকেজের কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি বলে দাবি করেছিল।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর সাংবাদিকদের কাছে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফুল ইসলাম এসব তথ্য তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটার বড়ুয়া ভবনের বিস্ফোরণ গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকেই ঘটেছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। যদিও এর আগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তাদের প্রতিবেদনে বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্যাস লাইন লিকেজের কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি বলে দাবি করেছিল।
রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর সাংবাদিকদের কাছে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফুল ইসলাম এসব তথ্য তুলে ধরেন।
এ জেড এম শরীফুল ইসলাম বলেন, মূলত গ্যাসলাইনে লিকেজ ছিল। সেই লিকেজের কারণে গ্যাস বের হয়ে ঘরে আবদ্ধ হয়। এরপর ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। গ্যাসলাইন লিকেজের কারণেই বিস্ফোরণ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা গ্যাসের রাইজারটি পরীক্ষা করেছি। সেটিতে অনেক পুরোনো ট্যাপ মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। রাইজারের ওপরের আবরণটিও ছিল অনেক পাতলা। রাইজারটির ভেতরের অংশ ভাঙা অবস্থায় ছিল। রাইজার থেকে গ্যাসের যে সার্ভিস লাইনটি ঘরের ভেতরে গেছে সেটাতে মূলত লিকেজ ছিল। সেখান থেকেই গ্যাস বের হয়েছে।
নকশাবহির্ভূত ভবন তৈরির জন্য বাড়ির মালিককে দায়ী করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফুল ইসলাম বলেন, রাইজারটি আগে মুক্ত অবস্থায় ছিল। কিন্তু বাড়ির মালিক নকশা অমান্য করে সীমানা দেয়াল লাগোয়া ২ থেকে আড়াই ফুট উঁচু ছাদ দিয়ে একটি বারান্দা তৈরি করেন। ঘরটির সামনে দুটি কক্ষ এবং পেছনে আরেকটি কক্ষ ছিল। এরপর ২০ ফুট বাই ৫ ফুট একটি শূন্যস্থান ছিল, যেখানে রাইজারটি ছিল।
তিনি বলেন, বারান্দা তৈরির পর সেটি আবদ্ধ হয়ে পড়ে। রাইজারটি এবং সংলগ্ন গ্যাসের লাইনের সঙ্গে আলো-বাতাসের সংযোগ ছিল না। বদ্ধ অবস্থায় নির্গত গ্যাস বের হতে না পেরে সেখানে জমে যায়। সেই গ্যাস যে ঘরে বিস্ফোরণ হয়েছে, এর দুই নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে এবং সেখানে জমে যায়।
এ জেড এম শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ওই ঘরের বাসিন্দা যিনি আহত হয়েছেন সন্ধ্যা রানী, তার সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, দুই নম্বর কক্ষে অর্থাৎ পূজার ঘরে ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়েছে।’
তিনি জানান, প্রথমে পাঁচতলা ভবনটির মালিক ছিলেন শশাঙ্ক বিশ্বাস। তিনি মারা যাওয়ার পর চার ছেলে বাড়ির মালিক হন। ১৯৯৭ সালে তারা বাড়িটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করেন। তিনিও মারা গেলে এখন তার দুই ছেলে অমল বড়ুয়া ও টিটু বড়ুয়া বাড়ির মালিক হিসেবে আছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘নকশা না মেনে ভবনটির বর্ধিত অংশ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ভবন মালিকের বিরুদ্ধে নিহত রিকশাচালকের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।’
জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পাঁচ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- গ্যাস-সংক্রান্ত সমস্যার জন্য হটলাইন চালু করা, ভবন মালিকদের বিল্ডিং কোড মানতে বাধ্য করা, সিডিএ’র নকশাবহির্ভূত ভবন দ্রুত অপসারণ, কেজিডিসিএল’র গ্যাসলাইন ও রাইজার নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং গ্যাসলাইন নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এর আগে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) তদন্তে গ্যাসলাইনে কোনো ত্রুটি না পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। ১৭ নভেম্বর সকালে দুর্ঘটনার পর গঠিত কেজিডিসিএল’র চার সদস্যের কমিটি মাত্র ৮ ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যায় প্রতিবেদন জমা দেয়। সে সময় তাদের প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
গত ১৭ নভেম্বর (রোববার) নগরের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডে বড়ুয়া ভবন নামে একটি পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে পড়ে। এ সময় আশপাশের আরও কয়েকটি বাসা এবং দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে এক নারী ও কিশোরসহ সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ৯ জন।
Discussion about this post