কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলায়মান সেলিমের মৃত্যু,,

আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের তৎকালীন আলোচিত ছাত্রনেতা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সাত মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় ঢাকার মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তারেক সোলায়মান সেলিমের সন্তান মোহাইমিন তারেক রাতুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের জুন মাসে আব্বার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। ভারতে এবং দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আব্বাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।’

তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। মঙ্গলবার বাদ জোহর নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন ময়দানে প্রয়াতের নামাজে জানাজা হবে বলে জানিয়েছেন রাতুল।

জানা গেছে, আশির দশকে ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া তারেক সোলায়মান সেলিম প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম নগরীর আলকরণে তার হাত দিয়ে গড়ে ওঠে খেলাঘরের শাখা আসর।

একপর্যায়ে চট্টগ্রামে খেলাঘর আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। সবশেষ ছিলেন খেলাঘরের একাংশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহসভাপতি।

১৯৯৪ সাল থেকে চারবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।

আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছিলেন তারেক সোলায়মান সেলিম। আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেলেও বিদ্রোহী হিসেবে ছিলেন ভোটের মাঠে।

গত বছরের মার্চে চসিক নির্বাচনের প্রথম দফা প্রচারণা শুরুর পর জোরালো গণসংযোগ শুরু করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়। জুন মাসে ক্যানসার ধরা পড়ার পর হাসপাতালেই গত সাত মাস কেটেছে তার।

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি, আলকরণ ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী মৃত্যুবরণ করেছেন। লিখিত তথ্য পাবার পর আমরা ওই ওয়ার্ডে শুধুমাত্র সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করব।’

এদিকে তারেক সোলায়মান সেলিমের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শোকবার্তায় উপমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক সোলায়মান সেলিম স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলনসহ দুঃসময়ের আওয়ামী পরিবারের একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন।

আন্দোলন-সংগ্রামে তার অগ্রণী ভূমিকা চট্টগ্রামের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তার মৃত্যুতে আওয়ামী পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন গভীর শোক জানিয়ে বলেছেন, ‘সেলিমের বাবাও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন। সেলিমও শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে রাজনীতি শুরু করেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চট্টগ্রামে যে ক’জন কর্মী খুব কম বয়সে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, সেলিম তাদের একজন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সে অনমনীয়, সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন।

সেলিম সাংস্কৃতিক আন্দোলন করেছেন। আদর্শের প্রশ্নে কখনও আপস করেননি। এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে চারবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। চট্টগ্রামের মানুষ তাকে আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’

তারেক সোলায়মান সেলিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।