উজ্জ্বল রায়, (নড়ািইল প্রতিনিধি■ অবশেষে লোকনাথ যখন পরমসিদ্ধি লাভ করলেন তখন তাঁর ও বেণীমাধবের বয়স নব্বই বছর আর তাঁদের গুরু আচার্য ভগবানের বয়স দেড়শো বছর। সিদ্ধিলাভের পর লোকনাথ বুঝলেন, তাঁর গুরু আচার্য ভগবান তখনো সিদ্ধিলাভ করতে পারেননি। যে গুরু নিজে কত দুঃখ কষ্ট সহ্য করে এমন কি নিজের জীবন তুচ্ছ করে তাঁকে এই সাধনমার্গের সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছেন, যাঁর অশেষ সেনহ ও কৃপাবলে তিনি আজ এই সিদ্ধিলাভ করতে সমর্থ হলেন, সেই গুরু আজও পড়ে রইলেন সাধনমার্গের নিন্মস্তরে। গুরুর অবস্থা উপলব্ধি করে কাতর কণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে বললেন লোকনাথ, গুরুদেব, আপনি অসীম কষ্ট স্বীকার করে আমাকে পরিত্রাণ করলেন, অথচ আপানি নিজে এখনো সেই অবস্থাতেই পড়ে রয়েছেন।
তা দেখে আমি যে আর ধৈর্যধারণ করতে পারছি না। সিদ্ধযোগী সুযোগ্য শিষ্য লোকনাথের কথা শুনে আচার্য বললেন, বাবা লোকনাথ, অমি চিরকালই জ্ঞানমার্গবিলম্বী। কর্মমার্গ অবলম্বন করে কখনো সিদ্ধিলাভের চেষ্টা করিনি। এখন কর্মমার্গে এই অপার সিদ্ধি লাভ দেখে বিস্মিত হচ্ছি। আমি শীঘ্রই দেহত্যাগ করে আবার জন্ম গ্রহণ করব। তখন তুমি আমাকে কর্মমার্গে পরিচালিত করে আমার উদ্ধারের বিধান করবে।
লোকনাথ একথা শুনে বললেন, তাই হবে গুরুদেব, আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব। এই বলে গুরুর চরণে সাষ্টঙ্গ প্রণাম করে যুক্তকরে দাঁড়িয়ে রইলেন লোকনাথ। এই অদ্ভত গুরুশিষ্য-লীলা থেকে বোঝা যায়, গুরু অসিদ্ধ হলেও তিনি শিষ্যকে প্রকৃত সাধনমার্গ দেখিয়ে তাঁকে পরমপদ প্রাপ্তি বা যোগসিদ্ধিলাভের অধিকারী করে তুলতে পারেন। এই গুরু-ঋণ স্মরণপ‚র্ব্বক গুরু ভগবানের জন্মান্তরের ভার গ্রহণ করলেন লোকনাথ। সিদ্ধিলাভের পর শুভ মূহুর্তে সিদ্ধপুরুষ লোকনাথকে সন্ন্যাসাশ্রমে দীক্ষা দিলেন আচার্য ভগবান। নতুন নামকরণ হলো, লোকনাথ ব্রহ্মচারী। পরমপুরুষ শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী। জয় শ্রীশ্রীথলোকনাথ বাবা।