গত বছরের দুই ঈদের মতো এবারও বন্ধ থাকছে চট্টগ্রাম নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এতে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন এগুলোর পরিচালনাকারীরা।
চট্টগ্রামের প্রধান বিনোদন কেন্দ্রগুলো ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারী রোধে স্থানীয় প্রশাসনের ঘোষণা অনুসার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, এবার ঈদেও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে।“যেহেতু সংক্রমণ এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট সব বন্ধ থাকবে।”বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনাকারীরা বলছেন, ঈদের সময়ই তাদের আয়ের মূল সময়। গত বছর তা হয়নি। দুই বছর বৈশাখেও ছিল বন্ধ। ফলে তারা বড়র ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব এমিউজম্যান্ট পার্ক’স এন্ড এট্রাকশনস (বাপা) এর মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর এম মাহফুজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্প্রতি বলা হয়, “বিনোদন পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ব্যবসায়িক মৌসুম হল ঈদ।“অন্যান্য শিল্প-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, গণপরিবহন সরকারি সিদ্ধান্তে খোলা থাকলেও এই খাতটির সকল ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এখন যদি বিনোদন কেন্দ্রগুলো খুলে না দেওয়া হয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
গত বছর লকডাউন তুলে দেওয়ার পর বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ধারণ ক্ষমতার ৫০ শতাংশের কম দর্শনার্থী ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে যেসব পদক্ষেপ নিতে বলেছিল, তা বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিশ্চিত করা হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।বাপা’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পার্কগুলো খোলা জায়গায়, তাই ছয় ফুটের বেশি দূরত্ব রেখে সেবা প্রদান সম্ভব। এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ ও ব্যাংক ঋণ রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় সরকারের কাছে ঈদের আগে বিনোদন পার্কগুলো খুলে দেয়ার অনুরোধ করছি।”নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র ফয়’স লেক এমিউজমেন্ট পার্কের ডেপুটি ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “আমাদের কর্মীদের বেতন, নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ মাসে ব্যয় ৪৫ লাখ টাকা। ঈদে বোনাসসহ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৫ লাখ টাকার কাছাকাছি। এখন পার্ক বন্ধ থাকায় কোনো আয় নেই। যা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সংকটের মুখে ফেলেছে।
“যেহেতু এবার ঈদে ছুটি মাত্র তিন দিন, তাই অনেকেই বাড়ি না গিয়ে শহরে থাকবেন। সরকারের কাছে আবেদন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদে যেন বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলার ব্যবস্থা করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে, আর কর্মচারীদের কর্মসংস্থানে ব্যঘাত ঘটবে না।”কাজীর দেউড়ি এলাকার চট্টগ্রাম শিশু পার্ক পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, “ঈদ ও পহেলা বৈশাখেই মূলত ব্যবসা হয়। কিন্তু গতবার দুই ঈদ ও পহেলা বৈশাখ লকডাউন ছিল। এবারও পহেলা বৈশাখ চলে গেছে। এখন ঈদও যাচ্ছে।“প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি বাঁচিয়ে রেখে কর্মচারীদের বেতন দেয়া, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ চালানোর পর ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য।”তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্র পরিচালনাকারীদের সংগঠন বাপা বলছে, বিনোদন কেন্দ্রগুলো আরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময় মতো পরিশোধ করা সম্ভব হবে না এবং অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই হবে।
তাই ঈদের আগে বিনোদন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার পাশাপাশি এই খাতকে সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতাভুক্ত করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
Discussion about this post