ডেস্ক রিপোটঃ০৯জুন
চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সম্প্রতি বেড়েছে আত্মহত্যার সংখ্যা। বিশেষ করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে। চলতি মাসের গত ৮ দিনে চট্টগ্রামে ৭টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। দারিদ্র্য, পারিবারিক কলহ, পড়ালেখা নিয়ে হতাশা ও মানসিক চাপের কারণে এমনটি ঘটছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আত্মহত্যা বর্তমানে মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে বলেও জানান তারা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে আগের তুলনায় আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে। এর পেছনে মূল কারণ মানসিক রোগ। গত এক বছরে বাংলাদেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যেটি আগে ছিল ১৮ শতাংশ। করোনাকালে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে আসছে সামাজিক সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে করোনায় এক বছরে চট্টগ্রামে আত্মহত্যা করেছেন ১ হাজার ৩৮১ জন। সারাদেশে এ সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। যাদের বেশিরভাগ আত্মহত্যা করেছেন পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট ও সম্পর্কের অবনতিসহ নানা কারণে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তানসেন রুজ বলেন, আমরা আত্মহত্যায় মারা যাওয়া ৫০০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছি। বিশ্লেষণে জানা যায়, অধিকাংশ হতাশা থেকে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা, আর্থিক অনটন, একাকীত্বের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া পিছিয়ে গেছে। এতে করে তারা ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। অনেকের হয়তো ইচ্ছে থাকে লেখাপড়া শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব নিবে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাওয়ায় তাদের তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। এছাড়াও অর্থিক সমস্যার কারণে অত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। করোনাকালে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। ফলে সংসারের খরচ মেটাতে গিয়ে আর্থিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যেটি পরবর্তীতে রূপ নিচ্ছে পারিবারিক কলহে।
অবশেষে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন।তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে দেখা যায়, বর্তমানে অধিকাংশ তরুণ-তরুণীই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৈনিক ৬ ঘণ্টার বেশি সময় কাটাচ্ছেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে তাদের খুব একটা যোগাযোগ হচ্ছে না। এতে করে তারা নিজেদের সমস্যাগুলো নিজেদের মধ্যে চেপে রাখছেন। যার প্রভাব পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে। এই কারণে অনেকে মানসিক অস্থিরতায় মধ্যে পড়েন। ফলে অনেকে আত্মহত্যায় নিজের প্রাণ বিসর্জন নিয়েছেন।
সমপ্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে পারিবারিক সমস্যা (৪১.২%), পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া (১১.৮%), বৈবাহিক সমস্যা (১১.৮%), ভালোবাসায় কষ্ট পাওয়া (১১.৮%), বিবাহবহির্ভ‚ত গর্ভধারণ ও যৌন সম্পর্ক (১১.৮%), স্বামীর নির্যাতন (৫.৯%) এবং (৫.৯%) অর্থকষ্ট থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দেশে বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭৪ লাখেরও বেশি। গত দশ বছরে বিশ্বব্যাপী এ রোগের ব্যাপকতা বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
বিশ্বে বিষণ্ণতার কারণে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগছেন। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক কলহের কারণেই সবচেয়ে বেশি মানুষ বিষণ্ণতা, একাকীত্ব কিংবা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক লাইলুন নাহার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিক সময় ব্যয় করার কারণে পারিবারিক বন্ধনটা কমে আসছে। ফলে মানুষের মধ্যে একাকীত্ব, হতাশা বাড়ছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণে সবার উচিৎ পরিবারের সদস্যদের সাথে বেশি বেশি সময় ব্যয় করা। কোনো সমস্যায় পড়লে বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে শেয়ার করা।
এতে করে হতাশা অনেকটা কমে যায়। মানসিক সমস্যায় পড়লে অনলাইনে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করা। সর্বোপরি সরকারের উচিৎ করোনা চিকিৎসার মত মানসিক রোগের চিকিৎসা সহজলভ্য করে দেয়া।
Discussion about this post