ডেক্স নিউজঃ০৬জুলাই
গত ২৪ ঘণ্টায় (৪ জুলাই -৫ জুলাই সকাল ৮টা) দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৪ জন, যা দেশে মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৬৪ জন। একদিনে এত মৃত্যু আর দৈনিক শনাক্তের এত সংখ্যা এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ।গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬৪ জনের মারা যাবার খবর দেওয়ার আগের ২৪ ঘণ্টাতেও স্বাস্থ্য অধিদফতর (৪ জুলাই) ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আগের রেকর্ড ভেঙে মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হল দেশে।গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬৪ জনকে নিয়ে দেশে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেলেন ১৫ হাজার ২২৯ জন। আর ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার অর্থাৎ এক হাজার মৃত্যু হতে দেশে সময় নিয়েছে মাত্র ৮ দিন। এত কম সময়ে মহামারির ১৬ মাসে এক হাজার মৃত্যু আর হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৭ জুন ১১৯ জন, ২৮ জুন ১০৪ জন, ২৯ জুন ১১২ জন, ৩০ জুন ১১৫ জন, ১ জুলাই ১৪৩ জন, ২ জুলাই ১৩২ জন, ৩ জুলাই ১৩৪ জন ৪ জুলাই ১৫৩ জন আর৫ জুলাই ১৬৪ জন মারা গেয়েছে ।এই আট দিনেই মারা গেছেন এক হাজার ১২ জন। এর আগে সবচেয়ে কম সময়ে ১ হাজার রোগীর মৃত্যু হয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে গত এপ্রিল মাসে। সেবারে এক হাজার মৃত্যুর হয়েছিল ১০ দিনে। এবারে ১০ দিনেরও কম সময়ে মৃত্যু হল এক হাজার মানুষের।আবার দৈনিক একশো মৃত্যুর আট দিনের মধ্যে পাঁচদিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল আট হাজারের বেশি। এর মধ্যে গত ৩০ জুন একদিনে আট হাজার ৮২২ জন শনাক্ত হবার খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর, যা কিনা আজকের আগে ছিল সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত।
আর এই আট দিনে ৩০ জুনের আট হাজার ৮২২ জনকে নিয়ে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬১ হাজার ৭৭৯ জন। এত কম সময়ে এত রোগীও আর শনাক্ত হয়নি গত ১৬ মাসের মহামারিকালে। এর মধ্যে গত ২৭ জুন শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৬৮ জন, ২৮ জুন আট হাজার ৩৬৪ জন, ২৯ জুন সাত হাজার ৬৬৬ জন, ৩০ জুন আট হাজার ৮২২ জন, ১ জুলাই আট হাজার ৩০১ জন, ২ জুলাই আট হাজার ৪৮৩ জন, ৩ জুলাই ছয় হাজার ২১৪ জন, ৪ জুলাই আট হাজার ৬৬১ জন।
আর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি, নয় হাজার ৯৬৪ জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনাতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন মোট নয় লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জন। একদিনে এত বেশি রোগী শনাক্ত হবারও রেকর্ডও দেখল বাংলাদেশ।করোনার এই ভয়ংকর রূপ আরও বাড়বে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন যারা মৃত্যুবরণ করছেন তারা তিন সপ্তাহ আগে সংক্রমিত হয়েছেন বলেই রোগতাত্ত্বিক সূত্র অনুযায়ী অনুমান করা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, কোনও কোনও জেলায় এই তিন সপ্তাহ আগে বিধিনিষেধ থাকলেও সব জেলায় ছিল না। দেশে ডেল্টা সংক্রমণের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন অর্থাৎ সামাজিক সংক্রমণ হয়েছে। কখন কোন দিক দিয়ে মানুষ সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে, কিছু বলাই যাচ্ছে না।তবে দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে যদি ‘কার্যকর ও বৈজ্ঞানিক’ পদক্ষেপ নেওয়া হত তাহলে ডেল্টা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ত না বলে অভিমত এই মহামারি বিশেষজ্ঞের।
তিনি বলেন, ‘যেখানে শনাক্ত বেশি হয়েছে সেখানে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাশের জেলাতে দেওয়া হয়নি। ফলে যেখানে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে মানুষ পাশের জেলায় গিয়েছে। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমে গেছে, রাজশাহীতে বেড়ে গেছে। রাজশাহীতে বিধিনিষেধ দিলো, নওগাঁতে দেয় নাই, সেখানেও বেড়ে গেল।’‘উচিত ছিল বেষ্টনীর মতো করে সবচেয়ে আক্রান্ত জেলাকে বন্ধ করা এবং তার পার্শ্ববর্তী সব জেলাতে যাতায়াত বন্ধ করা। তাহলে সংক্রমণকে আরেকটু স্লো ডাউন করা যেত।’
সংক্রমণকে ঠেকানো যায় না, বিলম্বিত করা যায় বা আক্রান্তের সংখ্যাটা কমানো যায় জানিয়ে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যেটা গত বছরে প্রথম ঢেউয়ের সময়ে হয়েছিল। সেবারে ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী যাতায়াত বন্ধ করার কারণে সংক্রমণ ধীর গতির ছিল। কিন্তু পরে ঈদের সময়ে সেটা না মানার কারণে আবার ঊর্ধ্বগতির হয়েছিল।কাজেই সীমান্ত এলাকাতে যখন সংক্রমণ দেখা দিল তখন সে নির্দিষ্ট জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাকেও যদি বিধিনিষেধের আওতায় আনা হত তাহলে এইভাবে তীব্রভাবে রোগী বাড়ত না। তাই ভবিষ্যতে যখন উচ্চহারে সংক্রমণ দেখা দেবে শুধু সেই এলাকা না, পাশের এলাকাগুলোতে বেষ্টনী করে দিতে হবে। তাহলে এটা আরও কার্যকরী হবে- বলেন ডা. মুশতাক হোসেন।
তথ্য সূত্রঃবাংলা টিউব্রিন
Discussion about this post